তরুণ ভোটাররা কী ভাবছেন

নির্বাচন নিয়ে তরুণদের উচ্ছ্বাস যেমন আছে, তেমনি কারও কারও শঙ্কাও কাজ করছে। আবার কেউ কেউ ভোট দিতে যাওয়া নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।

খুলনা জেলার মানচিত্র

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার প্রায় অর্ধলাখ নতুন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এই নির্বাচন নিয়ে তরুণদের মধ্যে উচ্ছ্বাস যেমন আছে, তেমনি কারও কারও মধ্যে শঙ্কাও কাজ করছে। আবার কেউ কেউ অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়া নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।

খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন আমেনা রহমান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। কেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে আশ্বস্ত হতে না পারায় গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ভোট দিতে যাননি। এবার প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই তরুণী। আমেনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার বড় একটি দল অংশ নিচ্ছে না। আমার এখানে কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। এরপরও ভোট দিতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার ভোটার হয়েছি। একধরনের উচ্ছ্বাস তো কাজ করছেই। যিনি উন্নয়ন করতে পারবেন বলে মনে করছি, তাঁকে ভোট দেব।’

খুলনা নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে এবার ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৫ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৪ জন। ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনের সময় ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এবার ভোটার বেড়েছে ৪২ হাজার ৪৩৬ জন। মোট ভোটারের বিশাল একটি অংশ তরুণ ভোটার। এই পরিসংখ্যান মাথায় রেখে তরুণ ভোটারদের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন মেয়র পদপ্রার্থীরা। তাঁরা সবাই নির্বাচিত হলে তরুণদের জন্য কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় বলেন, ‘খুলনার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ নতুন ভোটার। এই তরুণদের আমার আলাদা চিন্তাভাবনা আছে। তাঁরা তাঁদের মতো করে থাকতে চান, ঘুরতে চান, নির্মল আড্ডার জায়গা চান, নিজেদের কথা সবাইকে জানাতে চান। বিশ্বকে নিজেদের মতো করে দেখতে ও দেখাতে চান। তাঁরা নিজেদের একটি স্মার্ট শহরের অধিবাসী হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন।’

৪০ দফা ইশতেহারে তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি নগরের ভেতর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বাসস্টপেজসহ বিনোদনকেন্দ্রে বিনা মূল্যে ওয়াই–ফাইয়ের ব্যবস্থা করবেন। কেসিসির উদ্যোগে একটি ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হবে। নাগরিক সমস্যা জানানো, সেবা ও প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে। সব সেবাকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল করা হবে এবং ই-সেবা চালু করা হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়াল নির্বাচনী ইশতেহারে বেকার যুবশক্তির কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি খামার গড়তে উৎসাহ প্রদান ও নগর অর্থ বিভাগ থেকে ঋণের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করেছেন। তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং বা ই-ল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে আয়ের পথ সৃষ্টি করারও ঘোষণা দেন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে  যুবসমাজের মতামতের ভিত্তিতে তারুণ্যের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মেয়র পদের অন্য দুই প্রার্থীও তরুণদের জন্য উপযোগী শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ব্রজলাল কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন ভোটার রেদওয়ানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ এখনো ভালো মনে হচ্ছে। ভোটের দিন পরিবেশ এ রকম থাকলে আমি, আমার বন্ধুরা অবশ্যই ভোট দিতে যাব।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা শাখার সভাপতি কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, বয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় তরুণ ভোটাররা বেশি ভোটকেন্দ্রে যাবেন। তাঁরা নতুন ভোটার, ভোট দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের একধরনের আকাঙ্ক্ষা কাজ করে। অতটা রাজনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণ না করে যাঁদের পছন্দ হবে; যাঁদের কথা ভালো লাগবে, তাঁদের ভোট দেবেন তরুণ ভোটাররা।