অবসরে নৌকা তৈরি করে বাড়তি আয় করেন মানিক

নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত মানিক মিয়া। বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামেছবি: আবদুর রহমান ঢালী

কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন মানিক মিয়া। বাপ-দাদার এই পেশা আঁকড়ে ধরেই তাঁর জীবন–জীবিকা। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমের আগে অবসর সময়ে কড়ই ও চাম্বুলগাছের কাঠ দিয়ে তিনি বেশ কিছু নৌকা তৈরি করে বিক্রি করেন। এ থেকে তাঁর বাড়তি আয় হয় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা।

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া। তাঁর বাবা মৃত জয়নাল আবেদীন ও দাদা মাহমুদ আলীও কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। মানিক মিয়া, তাঁর দুই বড় ভাই দুলাল মিয়া ও আনিছ মিয়া কাঠমিস্ত্রির কাজের সঙ্গে জড়িত।

বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে আমিরাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মানিক মিয়া নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত। একটি নৌকার পাটাতন লাগাচ্ছিলেন তিনি। সেখানে আলাপকালে মানিক মিয়া বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিন থেকে নৌকা তৈরির কাজ শুরু হয়। ভাদ্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত এই কাজ চলতে থাকে। কাঠমিস্ত্রির কাজ থেকে নিয়মিত আয় ও নৌকা তৈরি করে বিক্রির মাধ্যমে বাড়তি আয়ের টাকায় তিন মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন।

মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ১০ হাত দৈর্ঘ্যের নৌকা ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, ১১ হাত দৈর্ঘ্যের নৌকা ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা ও ১২ হাত দৈর্ঘ্যের নৌকা ১০ থেকে ১১ টাকা বিক্রি করেন।

নৌকা তৈরি করছেন মানিক মিয়া। পাশে বসে তা দেখছে শিশুরা। বৃহস্পতিবার সকালে মেঘনা উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

আমিরাবাদ গ্রামের কৃষক আলম মিয়া বলেন, মেঘনার চরাঞ্চলের মানুষের বর্ষা মৌসুমে গবাদিপশুর ঘাস কাটা, মাছ ধরা, ফসলি জমি দেখা এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য নৌকার প্রয়োজন হয়। স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়ায় আমিরাবাদ থেকে পছন্দ মতো নৌকা কেনা যায়। এতে পরিবহন খরচও কমে যায়।

কাঠমিস্ত্রি মানিক মিয়ার তৈরি করা নৌকার মান তুলনামূলক ভালো বলে জানালেন হিজলতলী গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান।

বর্ষা মৌসুমের আগে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন কাঠমিস্ত্রি মানিক মিয়া। বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকারচর বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের অফিস সহায়ক ও আমিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, মানিক মিস্ত্রির ছেলে নেই। তিন মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করার জন্য নিয়মিত কাজের পাশাপাশি নৌকা বানিয়ে বাড়তি পরিশ্রম করে সংসার চালান তিনি।

মানিকারচর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গাজী মো. আলমগীর বলেন, নিয়মিত কাঠমিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি অবসরে প্রায় ৩৫ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমের আগে নৌকা তৈরি করে বাড়তি টাকা আয় করছেন মানিক মিয়া। তাঁর কারণে গ্রামটি নৌকার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।