‘দামে বেশি, মানে কম’ অবস্থা পর্যটক কমাচ্ছে শ্রীমঙ্গলে

শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দলবেঁধে ঘুরতে যান
ফাইল ছবি

সারি সারি চা–বাগান, পাখির কলরবে মুখর হাইল হাওর, সবুজে ঘেরা বিস্তৃর্ণ টিলা আর চমৎকার সব রিসোর্ট আছে চায়ের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। একদিকে হাওর, অন্যদিকে চা–বাগান নিয়ে এখানে পর্যটনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। করোনা মহামারির ধাক্কা ও মূল্যস্ফীতিতে পর্যটকের সংখ্যা কমছে বলে ধারণা পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। আর পর্যটকদের ভাষ্য, ট্রেনের পর্যাপ্ত টিকিট না থাকা, ভাঙা রাস্তা, চিত্তবিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা, সেবার তুলনায় হোটেল–রিসোর্টে বেশি খরচের কারণে পর্যটকেরা সেখানে যেতে চান না।

‘এসকেডি আমার বাড়ি’ রিসোর্টের মালিক সজল দাশ বলেন, ‘আমরা অন্যান্য দেশে দেখেছি, ছোট স্পটকেও সাজিয়ে–গুছিয়ে অনেক সুন্দর করে তোলা হয়। আমাদের দেশে সেটা কম। আড়াই বছর আগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় সরকারি নির্দেশনা মেনে হোটেল–রিসোর্ট বন্ধ রেখেছিলাম। এতে আমরা অনেক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। কিন্তু সরকারি প্রণোদনা বা সহযোগিতা পাইনি। যাঁরা শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে আসেন, তাঁদের অনেকেই চান সন্ধ্যার পরও পর্যাপ্ত চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা থাকুক। একটি পর্যটন এলাকায় সরকারি উদ্যোগে যতটুকু ব্যবস্থা থাকা উচিত, তা এখানে নেই।’

শ্রীমঙ্গলে গত শুক্রবার ঢাকা থেকে ঘুরতে এসেছিলেন মামুন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে এসেছি। সবকিছু আগের মতোই। নতুন কিছু নেই। এখানকার হোটেল–রিসোর্টে এত ভাড়া! এর চেয়ে কক্সবাজার বা ভারতে গিয়ে ঘুরে আসা যায়। টাকা বেশি নিক, সমস্যা নেই। সমস্যা হলো, যে টাকা নিচ্ছে, তার মতো সেবা তো মিলছে না।’

ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাপস দাশ বলেন, ‘তিন-চার বছর আগে এখানে প্রচুর পর্যটক আসতেন। এখন সেটা কম। করোনা ও সিলেটের বন্যার প্রভাবে এই ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি এখানকার যাতায়াতের ভোগান্তির কারণে অনেকেই আসতে চান না। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, এখানে একটি সরকারি বা বেসরকারি ট্যুর ইনফরমেশন সেন্টার করার জন্য, যেখান থেকে পর্যটকেরা সহজে সব তথ্য পাবেন। কিন্তু হচ্ছে না। হাইল হাওর পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে কিছু করা হলে ভালো হতো।’

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, শ্রীমঙ্গলে পর্যটনশিল্প এগিয়ে নিতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারের তরফ থেকে রাস্তাঘাট ও দর্শনীয় স্থানগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। আর হোটেলমালিকদের উচিত সেবার মান বাড়ানো।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীমঙ্গল থেকে পর্যটকেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বিগত ১০ বছরে হোটেল–রিসোর্ট ছাড়া নতুন করে পর্যটন স্পট গড়ে ওঠেনি। পর্যটকদের সন্ধ্যার পর সময় কাটানোর কোনো জায়গা নেই। সুযোগ–সুবিধা দেওয়া না গেলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে না।