৮ ভবন পৌনে ২ লাখে বিক্রি

নিলামে কেনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ‘ফিরতি নিলামে’ সাত-আট গুণ বেশি দামে আটটি ভবন বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো পাকা ভবন মাত্র ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। নিলামে কেনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ‘ফিরতি নিলামে’ সাত-আট গুণ বেশি দামে আটটি ভবন ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে ১০-১২ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

একটি প্রভাবশালী মহল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে কম দাম দেখিয়ে ভবনগুলো নিলামে উঠিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আটটি ভবনের ভিত্তি মূল্য তারা নির্ধারণ করে রেখেছিল মাত্র ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৬ টাকা। পরে সামান্য বেশি দর দেখিয়ে ভবনগুলো প্রকাশ্যে বিক্রি করে নিলাম কমিটি। নিলামে কেনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরে আটটি বিদ্যালয়ের একেকটি ভবন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা করে বিক্রি করেছেন। দুই থেকে তিনটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পুরোনো ভবনগুলো কিনেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি দুপুরে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলার আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। সে সময় নিলাম কমিটির সভাপতি ও ইউএনও রাবেয়া আক্তার, উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছয়ঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর ক্যাপ্টেন মাহবুব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াদিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটামাথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন নিলামে বিক্রি করা হয়। আগের নির্ধারণ করা ভিত্তিমূল্যের চেয়ে মাত্র ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা বেশিতে এসব বিদ্যালয়ের ভবনগুলো বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে আনোয়ারপুরের ভবন মাত্র ৯ হাজার ৫০০ টাকায়, ভাটামাথার ভবন ১৩ হাজার ৫০০ টাকায়, নুরপুর ক্যাপ্টেন মাহবুবের ভবন ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

এ ছাড়া রাধানগরের ভবন ৩০ হাজার টাকা, নুরপুরের ভবন ২৮ হাজার টাকা, নয়াদিলের ভবন ৩০ হাজার টাকা, ছয়ঘরিয়ার ভবন ২৪ হাজার টাকা ও জাঙ্গালের ভবন ২৮ হাজার ৫০০ টাকায় প্রকাশ্যে নিলামে তোলে বিক্রি করা হয়। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৩ শতাংশ টেক্স যোগ করে মূল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ১১ হাজার ৮১০ টাকা। সরকারি এই নিলামের পর আখাউড়া উপজেলায় পরিষদের ডাকবাংলোতে বসে ভবনগুলো ফিরতি নিলামে বিক্রি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, আনোয়ারপুরের ভবন প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার, নুরপুর ক্যাপ্টেন মাহবুব ভবন ৯১ হাজার, ভাটামাথা ভবন ৯১ হাজার, নয়াদিল ভবন ২ লাখ ১৬ হাজার, ছয়ঘরিয়া ভবন ১ লাখ ৩০, রাধানগর ভবন ২ লাখ ১০ হাজার, জাঙ্গালের ভবন ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা ও নুরপুর ভবন ১ লাখ ২৫ টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। সরকারি নিলামে কেনা ভবনগুলো মোট ১০ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর সঙ্গে ভ্যাট-টেক্সসহ নিলামের মূল্য যোগ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। নিলাম হওয়া বিদ্যালয়ের ভবনগুলো সম্পর্কে ধারণা নেই।’

আখাউড়ার ইউএনও ও নিলাম ডাক কমিটির সভাপতি রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘উপজেলার নিলাম কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্যরা রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলন করে দিয়েছে। সেটির ওপর ভিত্তি করে আমরা নিলামে ডাক তুলেছি। প্রতিটি বিদ্যালয়ের বিপরীতে একের অধিক ব্যক্তি ছিলেন।’