নির্বাচনের পরে আমরা কী চাই, তা নেতাদের জানাতে হবে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

ময়মনসিংহে ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত প্রাক্‌-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহ নগরের চরকালিবাড়ি এলাকার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারের হলরুমেছবি: প্রথম আলো

যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সবার মতৈক্য দেখতে পারছেন বলে জানিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হলেই যে পরিবর্তন টেকসই হবে, তার কী গ্যারান্টি? এটাও তো আমাদের চিন্তা করতে হবে। সে জন্য নাগরিক হিসেবে আমরা যেটা করতে চাচ্ছি, নির্বাচনের পরে আমরা কী চাই, তা নেতাদের জানাতে হবে।’

আজ সোমবার ময়মনসিংহ নগরের চরকালীবাড়ি এলাকার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারের হলরুমে ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত প্রাক্‌-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও দাবিগুলো তুলে ধরতে এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত। ‘নবনির্বাচিত সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা?’, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যাশা কী?’ এই শিরোনামে মুক্ত আলোচনা হয়। এতে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, কৃষকসহ নানা শ্রেণির মানুষ অংশ নেন। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন এতে।

আরও পড়ুন

দেশ একটি ক্রান্তিকালের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সেই ক্রান্তিকালের ভেতরেই এমন একটি পরিবর্তন আমরা প্রত্যাশা করি, যা বাংলাদেশে স্বাধীনতাত্তোর সময়ে আমরা আকাঙ্ক্ষা করে এসেছি। সেই আকাঙ্ক্ষার নতুন সুযোগ আমরা ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে গত ৫ আগস্টপরবর্তী সময়ে পেয়েছি। এই সুযোগ আমরা হেলায় হারাব কি না। এ রকম যেন পেছনে ফিরে তাকিয়ে না বলি, আমার কিছু করার ছিল, আমি কিরিনি, তাই আজকে আফসোস করে লাভ কী হবে। এই সময়ে প্রত্যেক নাগরিককে তাঁর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। নাগরিকেরা দায়িত্ব পালন না করে শুধু নেতারা করবেন, জনতা শুধু হাততালি দেবে, এই পরিস্থিতি তো চলতে পারে না।’

চলমান সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আলোচনায় ও বিতর্কে পিছিয়ে পড়া বা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও প্রত্যাশা তুলে ধরতে এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম একটি ‘নাগরিক ইশতেহার’ প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে। এই লক্ষ্যে উপস্থিত ব্যক্তিদের মতামতও নেওয়া হয় অনলাইন ভোটিংয়ের মাধ্যমে।

প্রাক্‌-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ছবি: প্রথম আলো

সভায় আগামী নির্বাচন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি, সুশাসন এবং স্থানীয় নানা সংকট নিয়ে সাধারণ মানুষ তাঁদের ক্ষোভ ও প্রত্যাশা তুলে ধরেন। তাঁরা আগামী সরকারের কাছে নানা বিষয়ের বাস্তবায়ন চান। একটি এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এস এম মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি বিগত সময় নাগরিকেরা তাঁর ভোট দিতে পারেননি। জনগণের মূল অধিকার ভোটাধিকার হরণ করে নেওয়া হয়েছিল। এটি যেন আর না ঘটে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ জেলা শাখার সম্পাদক ইয়াজদানী কোরাইশী বলেন, একটি গাড়ির সবকিছু ঠিক থাকলেও যদি ব্রেক কাজ না করে, তাহলে সবকিছু বৃথা। বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থায় যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে সবগুলো ‘মেকানিজম’ কাজ করবে। নিম্ন আদালতে সুশাসন থাকতে হবে এবং এটি জরুরি।
ময়মনসিংহ সদরের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের কথা তুলে ধরে ইয়ুথ অ্যাকটিভিস্ট দেলোয়ার হোসেন জানান, নগরের কাছারিঘাট এলাকায় একটি সেতু করার জন্য বিগত সরকারের প্রতিনিধিরা আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ লক্ষ লক্ষ নাগরিক একটি সেতুর জন্য কষ্ট করছে।

ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের শরীরে যদি ক্যামেরা থাকে, তাহলে তাঁরা কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে পারবেন না। এ ছাড়া দুর্নীতি নির্মুল করতে হলে সচিবালয় থেকেই প্রথমে শুরু করতে হবে।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্যে মতামত তুলে ধরেন হিজরাদের সংগঠন সেতু বন্ধুন কল্যাণ সংঘের সভাপতি তনু হিজরা, নারী উদ্যোক্তা সুরাইয়া ইয়াসমীন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারায়ণ হাজং প্রমুখ।

সভা শেষে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের হতাশ হলে চলবে না। হতাশা যখন আমাদের আক্রান্ত করে, তখন ফলাফলও তেমনই হয়। পরিবর্তন যে সম্ভব, তা গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমরা দেখেছি। রাজনীতিবিদেরা অবশ্যই তা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন।’