সিলেট থেকে দূরপাল্লার বাসে ভাড়ার সমন্বয় নেই

রেকর্ড হারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সিলেটে বেড়েছে বাস ভাড়া। হঠাৎ বাড়তি ভাড়ার কারণে অনেক বাসে যাত্রী কম। সিলেট নগরের হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায়ছবি: আনিস মাহমুদ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে সিলেট থেকে ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করা দূরপাল্লার বাস জনপ্রতি ৫৭০ টাকায় চলাচল করত। তবে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে মূল্যবৃদ্ধির পর গতকাল শনিবার বিকেলে বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দূরপাল্লার বাসের (৫২ সিটের) ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

সড়ক পথে সিলেট থেকে ঢাকার দূরত্ব ধরা হয় ২৪৪ কিলোমিটার। আগে এই দূরত্বের বাসভাড়া নেওয়া হতো ৫৭০ টাকা (৪০ আসনের বাস)। এখন বর্ধিত ভাড়ায় বিভিন্ন পরিবহনগুলোয় ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া রাখা হচ্ছে।

সিলেটের পরিবহনশ্রমিক ও নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট থেকে ঢাকায় যাতায়াত করা বাসের আসনসংখ্যা থাকে ৩৬ থেকে ৪০। ভাড়া নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে কিলোমিটারপ্রতি নির্ধারিত যে ভাড়ার হিসাব দেওয়া হয়েছে, সেটি ৫২ আসনের বাসের। দূরপাল্লার বাসে ৫২ আসন না থাকায় ৪০ আসনের বাসের হিসাব ধরলে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া হয় ২ টাকা ৮৬ পয়সা। সে হিসাবে ভাড়া হয় প্রায় ৬৯৮ টাকা।

এদিকে সিলেট থেকে ঢাকায় যাতায়াত করা বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে সরেজমিনে দেখা যায়, একেকটি পরিবহনে একেক ধরনের ভাড়া রাখা হচ্ছে। কিছু পরিবহনের বাস ৬৮০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে যাত্রী পরিবহন করছে। আবার কিছু পরিবহন ৭০০ টাকায় যাত্রী নিচ্ছে। তবে বিরতি দিয়ে যাওয়া বিভিন্ন পরিবহনগুলোয় ভাড়া আরও কম রাখা হচ্ছে। সেগুলোতে ভাড়া রাখা হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। আগে এসব পরিবহন ৪৫০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করত।

আজ রোববার সকাল ১০টায় কদমতলী এলাকার হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা শিপন আহমদ বলেন, ‘আগে আমাদের জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৫৭০ টাকা। এখন আমরা ৭০০ টাকা যাত্রী নিচ্ছি। এখনো আমাদের কাছে ভাড়ার কোনো তালিকা আসেনি। আশা করছি, বিকেলের দিকে তালিকা চলে আসবে।’

টিকিট কাউন্টারে সালমান মিয়া ও সাদিকুর রহমান নামের দুই বন্ধু ঢাকায় যাওয়ার জন্য টিকিট কাটছিলেন। ঢাকায় চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে যাচ্ছেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, হঠাৎ ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। একলাফে জনপ্রতি ১০০ টাকার বেশি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।

হুমায়ুন রশীদ চত্বরে এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে থাকা বিক্রেতা সামু আহমেদ বলেন, আগে ৫৭০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করা হলেও নতুন বর্ধিত ভাড়ায় ৬৮০ টাকায় যাত্রী নেওয়া হচ্ছে, তবে তালিকা আসেনি। তালিকা এলে ভাড়া কিছুটা কম-বেশি কিংবা একই হারে থাকবে।

কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে আল-মোবারাকা পরিবহনের আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা আগে ৪৫০ টাকায় ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করতাম। কিন্তু এখন বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিলেটের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবির বলেন, অনেকে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়ার হিসাব গরমিল করে বসেন। ভাড়া নির্ধারণ কমিটির হিসাবে ৫২ আসনের বাসের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে দূরপাল্লার পরিবহনে ৫২ আসনের বাস নেই। সিলেট থেকে ঢাকা যাতায়াত করা বাসগুলোর আসনসংখ্যা ৩৬ থেকে ৪০। সে হিসাবে ২ টাকা ৮৬ পয়সা কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া হয়। তিনি বলেন, এখন ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় ঢাকার যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ভাড়ার তালিকা এখনো ছাপা হয়নি। তালিকা ছাপানোর পর ভাড়া সমন্বয় করে নির্ধারণ করা হবে।