বেশি দামের আশায় তোলা হচ্ছে অপরিপক্ব পেঁয়াজ

বেশি দাম পাওয়ার আশায় কৃষকেরা অপরিপক্ব মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। এতে উৎপাদন কম হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে লাভের আশায় কৃষকেরা খেত থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে রোদে শুকিয়ে বিক্রির উপযোগী করছেন। গতকাল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মনছের খার পাড়ায়ছবি: প্রথম আলো

বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ অনেক বেশি। বাড়তি দামের আশায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক খেত থেকে অপরিপক্ব মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। স্ত্রী–সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে জমিতে নেমে পড়েছে অনেক কৃষক পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের কয়েকটি খেতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

উপজেলার দক্ষিণ উজানচর মনছের খাঁর পাড়ার কৃষক ইউসুফ খাঁ খেতে স্ত্রী রিজিয়া বেগমসহ তিন কন্যা নিয়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলতে নেমে পড়েছেন। ইউসুফ খাঁ পেঁয়াজ তুলছেন, বসে পেঁয়াজ কাটছেন স্ত্রী রিজিয়া বেগম। কাজে সহযোগিতা করছেন তাঁদের তিন কন্যাসন্তান।

বর্তমানে বাজার দাম অনেক ভালো থাকায় সব তুলে ফেলছি। দাম কমে দুই হাজার টাকা মণ হলে তখন অনেক লোকসান হবে। এই কারণে শুধু আমরাই না, সবাই তুলে ফেলছে।
রিজিয়া বেগম, গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ উজানচরের কৃষক ইউসুফ খাঁর স্ত্রী

ইউসুফ খাঁ বলেন, প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেন। বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন খুব ভালো হয়নি। এক মণ গুটি পেঁয়াজ ৫ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছিল। বর্তমান বাজারে দাম অনেক হওয়ায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন।

ইউসুফ খাঁ আরও বলেন, ‘প্রথম দফায় পাঁচ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছিলাম।’ দিনদিন দাম কিছুটা কমে আসছে বলে তিনি মনে করেন। এ কারণে বেশি দামের আশায় দ্রুত তুলে বিক্রি করছেন। গত সোমবার চার হাজার টাকায় এক মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন।

রিজিয়া বেগম বলেন, ‘বর্তমানে বাজার দাম অনেক ভালো থাকায় সব তুলে ফেলছি। দাম কমে দুই হাজার টাকা মণ হলে তখন অনেক লোকসান হবে। এই কারণে শুধু আমরাই না, সবাই তুলে ফেলছে। অনেকের লোন নেওয়া আছে। ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গোয়ালন্দে ২ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এ বছর প্রায় ১১০ হেক্টর জমিতে বেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ হয়েছে। অক্টোবর মাসের শুরু থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ শুরু হয়। রোপণের ১০০ বা ১১০ দিন বা তিন মাস পর পেঁয়াজ পেকে পরিপক্ব হয়।

উজানচর গফুর মাতুব্বার পাড়ার মাঠে স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে পেঁয়াজ তুলছিলেন আরেক কৃষক হাসেম খান। তিনিও দেড় বিঘা জমিতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে পেঁয়াজ তুলছি। প্রথম দিন সাড়ে চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছিলাম। গত সোমবার চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।’

কেমন লাভ হচ্ছে জানতে চাইলে গফুর বলেন, ‘সব পেঁয়াজ বিক্রি শেষে লাভ–লোকসান বলা যাবে। এখন তো কেবল বেচা শুরু করেছি। তবে আরও ১৫-২০ দিন পর তুলতে পারলে ভালো হতো। কারণ, এই পেঁয়াজ এখনো পাকেনি। আকারেও আরও অনেক বড় হবে। তখন বিক্রি করতে পারলে ভালো হতো।’

দুই মেয়েকে নিয়ে পেঁয়াজ তোলায় ব্যস্ত আবু কালাম বলেন, ‘এ বছর প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। বেশির ভাগ টাকা এনজিও থেকে এবং অন্যের কাছ থেকে ঋণ করে নেওয়া। পেঁয়াজখেতে পটোল লাগিয়েছি। দাম বেশি পাওয়ায় আগেভাগে বেচে দিচ্ছি। এই পেঁয়াজ বিক্রি করে তাদের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। যে কারণে দ্রুত বিক্রি করে দিচ্ছি। পেঁয়াজ তোলার পর পটোলখেতের যত্ন করতে হবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান বাজারমূল্য বেশি থাকায় অধিকাংশ কৃষক আগেভাগে পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। পেঁয়াজ তোলা শেষে ওই জমিতে হালি পেঁয়াজ, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের আবাদের সুযোগ পাচ্ছেন। আগেভাগে পেঁয়াজ তোলায় উৎপাদন কিছুটা কম হলেও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় আমরা কৃষকদের বাধা দিচ্ছি না।’