রাখাইনদের ভূমি, শ্মশানের জমি ও পুকুর দখলমুক্ত করার আহ্বান

রাখাইনদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য জাতীয় পর্যায়ের একটি নাগরিক প্রতিনিধিদল আজ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাখাইন পল্লির বেদখল হওয়া ভূমি, শ্মশানের জমি ও পুকুর পুনরুদ্ধার করে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় পর্যায়ের একটি নাগরিক প্রতিনিধিদল। আজ রোববার তাঁরা সারা দিন পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আহ্বান জানান।

এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। প্রতিনিধিদলে আরও আছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন, অনুবাদক ও গবেষক মুহাম্মদ হাবিব, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা, গবেষক, লেখক ও পরিসংখ্যানবিদ হাসিব মাহমুদ প্রমুখ।

পটুয়াখালীর রাখাইনদের চলমান ভূমি সমস্যার ধরন পর্যবেক্ষণের জন্য ১২ সদস্যের নাগরিক প্রতিনিধিদল ১ ও ২ জুন কয়েকটি রাখাইন পল্লি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের স্থানীয় রাখাইন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এসব এলাকার রাখাইন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জানতে পারেন, ১৭৮৪ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলে ৫০ হাজারের বেশি রাখাইন বসবাস করত। ১৯০০-১৯৪৮ সালে এই সংখ্যা হয় ৩৫ হাজার। বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের বর্তমান সময়ে করা জরিপ থেকে জানা যায়, পটুয়াখালী জেলায় বর্তমানে রাখাইন জনসংখ্যা মাত্র ১ হাজার ১৬৯ জন। সেখানে কলাপাড়া উপজেলাতে এখন মাত্র ৩০৬টি রাখাইন পরিবার বসবাস করছে। অথচ বর্তমানে তাঁদের ভূমিসংক্রান্ত মামলা রয়েছে ৩৭৩টি।

নাগরিক প্রতিনিধিদল প্রথমে কুয়াকাটার নিকটবর্তী একটি রাখাইন পাড়ার বৌদ্ধবিহার পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা জানতে পারেন সেখানে বৌদ্ধবিহারের জন্য দান করা জমি বেদখল হয়েছে। মামলার উচ্চ আদালতের রায় বিহারের পক্ষে রয়েছে। কিন্তু সেই রায়ের তোয়াক্কা না করে সেটি দখলের জন্য অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে দখলকারীরা। সেখানকার ভিক্ষুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। সেই বিহারের পাশে এখন মাত্র ৬টি রাখাইন পরিবার রয়েছে। বাকিরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।

এরপরে প্রতিনিধিদল কুয়াকাটার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার পরিদর্শন করে। ১৭৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই উপাসনালয়ের দেয়াল ভেঙে দখলীয় রাখাইন মার্কেটসংলগ্ন ভূমিতে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পাবলিক টয়লেট নির্মাণের চেষ্টা করেছিল। এর বিপক্ষে বিহার কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলে উচ্চ আদালত এখানে স্থগিতাদেশ দেন। সেটি প্রদর্শন করলে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ রাখেন। কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অতি দ্রুতগতিতে অনেক শ্রমিক নিয়োগ করে টয়লেটের ঢালাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করা হয়। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ও নাগরিকদের ধারাবাহিক প্রতিবাদের মুখে সেখানে টয়লেট স্থাপন আপাতত বন্ধ রয়েছে।

নাগরিক প্রতিনিধিদল রাখাইন জনগোষ্ঠীর বৌদ্ধবিহারের জমি এবং সেখানে অবৈধভাবে স্থাপনা ও শৌচাগার তৈরি বন্ধ করা এবং এই বিষয়গুলোর প্রতি আরও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) যাদব সরকার, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ, মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এগুলো বন্ধের আহ্বানের পাশাপাশি বাংলাদেশে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নাগরিক প্রতিনিধিদল দাবি জানায়।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাগরিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রাখাইন জনগোষ্ঠীর কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা তাঁদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাখাইনদের সমস্যাগুলো সমাধান করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’