রায়পুরায় প্রার্থীকে হত্যার ১০০ ঘণ্টা পরও প্রধান আসামিকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

নরসিংদী জেলার মানচিত্র

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় গণসংযোগের সময় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়াকে পিটিয়ে হত্যার ১০০ ঘণ্টা পরও হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি ও মামলার প্রধান আসামি ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসান রুবেলকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাফায়েত হোসেন জানান, ‘এ পর্যন্ত আমরা মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। প্রধান আসামি আবিদ হাসানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য আসামিরাও ঘটনার পর থেকে পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে একের পর এক অভিযান চলছে। দ্রুতই তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন।’

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন রায়পুরার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের নজরপুর গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে মো. বাছেদ মিয়া (৫০), তাঁর ছেলে মো. আলামিন মিয়া (২৩) এবং এজাহারভুক্ত আসামি পৌরসভার হাশিমপুর এলাকার মো. কবির হোসেনের ছেলে রামিম হোসেন (১৯)।

গত বুধবার দুপুরে উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন তালা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া। ওই সময় জমির আল ধরে দৌড়ে পালিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের পার্শ্ববর্তী বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের পুলিশ ফাঁড়িতে যান তিনি। পরে বিকেল ছয়টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশের রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বৈধ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়ার মৃত্যুর এ ঘটনায় এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সব পদের নির্বাচন স্থগিত করেছে।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সুমন মিয়ার বাবা উপজেলার চরসুবুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন ২৬ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৪৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এ ছাড়া সংসদ সদস্য রাজিউদ্দীন আহমেদের ছেলে রাজীব আহমেদ দ্রুত বিচার আইনে করা অপর মামলায় ২৭ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করেছেন। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুমন মিয়ার প্রতিপক্ষ চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসানকে।

সুমনের বাবা নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার দেখতে চাই। বিশেষ করে প্রধান আসামি আবিদ হাসান গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি নেই। আমার ছেলেকে হত্যার পর আবিদের নানা অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

নিহত ব্যক্তির স্বজন, অনুসারী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী লায়লা কানিজের সঙ্গে যৌথভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে পাড়াতলীতে গিয়েছিলেন। যাওয়ার পথে বেলা দেড়টায় পাড়াতলীর মীরেরকান্দি এলাকায় অপর ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসানের মুখোমুখি হন। ওই সময় আবিদ হাসান বিভিন্ন কথা বলে সুমনকে উসকানি দেন। একপর্যায়ে অতর্কিতে আবিদসহ তাঁর উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকেরা দুটি গাড়ি (প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস) ভাঙচুর শুরু করলে সুমনের দেহরক্ষী লুৎফর গাড়ির ভেতর থেকে শটগান বের করে ফাঁকা গুলি করেন। এরপরই আবিদের শত শত কর্মী-সমর্থক সুমনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মাথায়, নাকে, মুখে উপর্যুপরি আঘাতে রক্তাক্ত করেন। ভয়ে আতঙ্কে সুমনের কর্মীরা একেকজন একেক দিকে পালিয়ে যান।

নিহত সুমন মিয়া অ্যাগ্রো ফার্ম, পোলট্রি ফিড, মাছের খামারের ব্যবসা করতেন এবং নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। বিয়ের ১৬ বছর পর তাঁর স্ত্রী লিজা আক্তারের গর্ভে যমজ বাচ্চা এসেছে, রাজধানীর একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপাচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। অনাগত দুই সন্তানকে দেখে যেতে পারলেন না নিহত সুমন মিয়া।