অডিও ফাঁসের বিষয়ে যা বললেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠসদৃশ’ কথোপকথনের তিনটি অডিও ক্লিপ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে উপাচার্যের কোনো বক্তব্য এত দিন জানা যায়নি। অবশেষে এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন

উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, কয়েক বছর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগ খোলা হয়। সেখানে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নেন অলিউর রহমান। তখন একটা বোর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু কোরাম পূরণ না হওয়ায় সেটি বাতিল হয়ে যায়। অলিউরের সঙ্গে উপাচার্যের মুঠোফোনে কথা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। তবে যে অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, সেগুলো সঠিক নয়। এগুলো তাঁর ‘কণ্ঠসদৃশ’ বলে তিনি দাবি করেন।

অডিও ফাঁসের বিষয়ে উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, প্রশ্ন তৈরি করেন বোর্ডের সদস্যরা। তারপর পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে কোরাম পূরণ না করার কারণে কাজ এগোয়নি। সেখানে উপাচার্য কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করলেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

আরও পড়ুন

খণ্ডকালীন শিক্ষক অলিউর রহমানের মুঠোফোনে কিছু কথা হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে আমার কাছে জানতে চাওয়াতে বিভিন্ন ধরনের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু আমি তো প্রশ্ন করি না। আমাকে কোনো পাপ স্পর্শ করেনি, করবে না। আর আমি অর্থ বাণিজ্য করছি, এটা যদি কেউ এক কোটি ভাগের এক ভাগও প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমার যা শাস্তি তা মেনে নেব।’

কথোপকথনের ক্লিপগুলোতে এক চাকরিপ্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যা ও পরবর্তী নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত করার আশ্বাস দেন উপাচার্যের (ভিসি) ‘কণ্ঠসদৃশ’ ওই ব্যক্তি। একই সঙ্গে প্রার্থীকে বোর্ডের প্রশ্ন সরবরাহ ও কীভাবে লিখতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ ও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে বোর্ডের আয়োজন ও বোর্ড সম্পন্ন করতে টাকার বিনিময়ে বোর্ডে তিনজন সদস্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয় কথোপকথনে।

কথোপকথনগুলো ফেসবুকে ছড়ানোর ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় গিয়ে জিডি করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিসি স্যার আমাকে জিডি করতে বলেছেন, তাই ইবি থানায় জিডি করেছি। অডিও পোস্টদাতার অ্যাকাউন্টটি শনাক্ত করতে জিডি করা হয়েছে। অডিও কার এটা তো আমি জানি না, এটা প্রশাসন বের করবে।’

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দিনের বিভিন্ন সময় ‘ফারাহ জেবিন’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে কথোপকথনের তিনটি অডিও পোস্ট করা হয়। এগুলোর প্রথমটি ৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের, দ্বিতীয়টি ১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড ও তৃতীয়টি ২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের। অডিওতে কথা বলা কণ্ঠটি উপাচার্য শেখ আবদুস সালামেরই কি না, সেটি যাচাই করতে পারেনি প্রথম আলো।

অডিও তিনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের বিষয় নিয়ে নিয়োগপ্রার্থী ও বর্তমানে ওই বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক অলিউর রহমানের সঙ্গে উপাচার্যের ‘কণ্ঠসদৃশ’ ওই ব্যক্তির আলাপন হয়। তবে অডিওতে অলিউর রহমানের কথা শোনা যায়নি।

গত ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করেন অলিউর রহমানসহ মোশারফ হোসেন ও বিউটি মণ্ডল নামের আরও দুজন প্রার্থী। এ সময় বোর্ডে তিন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় বোর্ড স্থগিত হয়। পরে গত ২ ডিসেম্বর আবারও বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। ২২ ফেব্রুয়ারি ওই নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।