রুমায় জঙ্গি ও কেএনএফের পরিত্যক্ত গোপন আস্তানায় যা যা পাওয়া গেল

বান্দরবানের রুমায় দুর্গম লুয়াংমুয়ালপাড়া এলাকায় কেএনএফ ও জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার পরিত্যক্ত গোপন আস্তানা। গতকাল রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানে রুমায় দুর্গম পাহাড়ের খাদে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) পরিত্যক্ত গোপন আস্তানা ও একটি কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার শারক্কীয়ার জঙ্গিদের তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে রোববার এসবের সন্ধান মেলে। তবে প্রায় তিন ফুট গভীর কবর খুঁড়ে দুটি গিলাকাপড় (কোমরতাঁতের কাপড়) পাওয়া গেছে, তবে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি।

থানচি থেকে র‍্যাব ১১ জানুয়ারি আবু সালেহ ও একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। র‍্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার দুই জঙ্গির কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়, রুমা উপজেলার রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের দুর্গম লুয়াংমুয়ালপাড়া এলাকায় কেএনএফ ও জঙ্গিদের একটি গোপন আস্তানা রয়েছে। ওই আস্তানার পাশে অসুস্থ ও অভুক্ত অবস্থায় মারা যাওয়া একজন জঙ্গিকে দাফন করা হয়েছে। লুয়াংমুয়ালপাড়াটি রুমার রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নে হলেও থানচি উপজেলার সদর থেকে ২৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। থানচি হয়ে সাত কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে যেতে হয়।

আরও পড়ুন

রোববার যৌথ অভিযান চলাকালে প্রথম আলোর এই প্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সরেজমিনে লুয়াংমুয়ালপাড়ায় দেখা যায়, জনমানবশূন্য পাড়ায় বাড়িঘর পরে আছে। ১৪টি পরিবারের প্রত্যেক বাড়িতে ধানের গোলা, জিনিসপত্র রয়েছে। বম জনগোষ্ঠীর গৃহপালিত প্রাণী গয়ালও চরে বেড়াতে দেখা গেছে। পাশের তামলাওপাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাড়া এলাকায় কেএনএফ ও জঙ্গিরা গোপন আস্তানা করার পর থেকে লুয়াংমুয়ালপাড়া ও পাশের পাইনুয়ামপাড়ার বাসিন্দারা চরম উৎপাতের মধ্যে পড়েছিলেন। খাদ্য সরবরাহ করা, গয়াল, মুরগি, ছাগল দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। নানামুখী চাপে ও অত্যাচারে দুই পাড়ার ২৭টি পরিবারের সবাই গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন।

আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কেএনএফ ও জঙ্গিরা গোপন আস্তানা করার পর থেকে লুয়াংমুয়ালপাড়া ও পাশের পাইনুয়ামপাড়ার বাসিন্দারা চরম উৎপাতের মধ্যে পড়েছিলেন। ২৭টি পরিবারের সবাই গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন।

অভিযানে লুয়াংমুয়ালপাড়া থেকে কিছু দূরে গহিন জঙ্গলবেষ্টিত প্রায় দেড় হাজার ফুট গভীর পাহাড়ি খাদের ঝিরির তীরে কেএনএফ ও জঙ্গিদের গোপন আস্তানা পাওয়া যায়। ভেঙে ফেলা পরিত্যক্ত আস্তানায় শার্ট, প্যান্ট, গিলাপকাপড়, রান্নার সরঞ্জাম (হাঁড়িপাতিল) ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। খাদের নিচে বাঁশঝাড়ে ঢাকা আস্তানায় সূর্যের আলো এসে না পৌঁছায় প্রচণ্ড ঠান্ডা। যে জঙ্গি (আমিনুল ইসলাম) ওই আস্তানায় মারা গেছেন বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাঁর বাবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড়চোপড় থেকে একটি ট্র্যাকস্যুট ছেলের বলে ধারণা করে কুড়িয়ে নিয়েছেন। আস্তানা থেকে কিছু দূরে পাহাড়ের ঢালে একটি কবরের মতো মাটিচাপা স্থান পাওয়া যায়। সেটি খনন করে বাঁশের টুকরা ও দুটি কাপড় ছাড়া কোনো লাশ পাওয়া যায়নি।

বান্দরবানের রুমায় দুর্গম লুয়াংমুয়ালপাড়া এলাকায় জঙ্গিদের পরিত্যক্ত গোপন আস্তানায় মৃত জঙ্গির কবর সন্দেহে খনন করা হচ্ছে। গতকাল রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

অভিযানের সময় সঙ্গে থাকা জঙ্গিরা বলেছেন, তাঁরা ওই আস্তানায় ৯ দিন ছিলেন। আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিনকে অসুস্থ অবস্থায় কাঁধে করে নিয়ে এসেছিলেন। কয়েক দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে দাফন করা হয়েছে।

মানুষশূন্য লুয়াংমুয়ালপাড়া এলাকায় অভিযানের সময় হেলিকপ্টারে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক মশিউর রহমান, আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসেছিলেন। কবরে জঙ্গির লাশ পাওয়া যাবে—এ তথ্য পেয়ে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন শিবলী, রুমা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন র‍্যাবের ওই দুই কর্মকর্তার সঙ্গে ছিলেন। তবে গভীর খাদে রশি ধরে ঝুলতে ঝুলতে নামতে না পারায় সবাই পরিত্যক্ত গোপন আস্তানা এলাকায় যেতে পারেননি।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেছেন, পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে থাকা জঙ্গিদের ধরতে অক্টোবর থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জঙ্গি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। মৃত জঙ্গির লাশ কবর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।