‘টাকা না দিলে আরও তিনটি মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেব’

হেফাজতে নির্যাতন
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরে এক কাপড় ব্যবসায়ী ও তাঁর কিশোর ছেলেকে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। চার দিন পর ২০ হাজার ৫০০ টাকা ঘুষ নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম মামুন। তিনি নগরের কোনাবাড়ী এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করেন এবং ওই এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। কোনাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিউল হাসান ওরফে সুমনের বিরুদ্ধে তিনি নির্যাতন ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন। তবে অভিযুক্ত জামিউল তাঁদের আটক করার কথা স্বীকার করলেও নির্যাতন ও ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩ নভেম্বর নগরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে বায়েজিদ নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পাশের ঘরের ভাড়াটে ব্যবসায়ী মামুনকে আটক করেন কোনাবাড়ী থানার এসআই জামিউল হাসান। তাঁকে থানায় আটকে রেখে নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পরে তিনি কোনো তথ্য দিতে না পারায় তাঁর কিশোর ছেলেকে আটক করে মারধর করা হয়। এরই মধ্যে ১৮ নভেম্বর গোপন সংবাদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি আরিফুল ইসলামকে টঙ্গীর বিসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে আটক ব্যবসায়ী মামুন ও তাঁর ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

ব্যবসায়ী মামুন অভিযোগ করে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর এসআই জামিউল তাঁদের ছেড়ে দিতে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তাঁকে আটক রেখেই দর-কষাকষি করেন। পরে ৪ লাখ, ৩ লাখ এবং শেষে তাঁর স্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে থানায় আসতে বলেন। টাকা না দিলে শ্রমিক বিক্ষোভের মামলায় ছেলেসহ তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। বাড়িতে টাকা না থাকায় ধারদেনা করে তাঁর স্ত্রী ২০ হাজার ৫০০ টাকা তাঁকে দিলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ী মামুন বলেন, ‘আমি পুরোনো কাপড় কিনে বিক্রি করি। খুব বেশি আয় হয় না। আমার স্ত্রী একটি পোশাক কারখানা কাজ করেন। তাঁর বেতন দিয়েই সংসার চলে। এসআই সুমন বলেন, “টাকা না দিলে তোর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেব।” তখন আমি চিন্তা করছি, আমারে যদি জেলে পাঠায়, তাহলে তো সবাই ভাববে আমি ওই ছেলেকে হত্যা করেছি। তখন আমি মুখ দেখাব কীভাবে? পরে আমার স্ত্রীকে বলেছি, যেভাবে পারো কিছু টাকা দিয়ে আমাদের বের করো। পরে আমার স্ত্রী ২০ হাজার ৫০০ টাকা দিলে আমাদের ছেড়ে দেয়।’

ব্যবসায়ী মামুন ও তাঁর ছেলেকে থানায় চার দিন আটক রাখার কথা স্বীকার করে এসআই জামিউল হাসান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুন, তাঁর ছেলে ও ওই বাড়ির নিরাপত্তাপ্রহরীকে আটক করে রাখা হয়েছিল। মূল আসামি ধরার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে কোনো টাকাপয়সা নেওয়া হয়নি।

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘কাউকে আটকে রাখা হয়নি। বরং মামুন বলেছিল, “স্যার যত দিন মূল আসামি ধরা না হয়, তত দিন তাঁকে যেন আটকে রাখি।” এ ছাড়া টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই।’