শৌচাগারে পড়েছিল গৃহবধূর মরদেহ, স্বজনদের দাবি জিনে মেরে ফেলেছে

মরদেহ উদ্ধার
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে আজ শনিবার ভোরে এক গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গৃহবধূর স্বামী ও স্বজনদের দাবি, ওই নারীকে জিনে হত্যা করে শৌচাগারে ফেলে রেখেছে। পরে তিনি তাঁর স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। গ্রামবাসীর কাছ থেকে এ ধরনের খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানা-পুলিশ গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর গ্রামে। নিহত গৃহবধূর নাম রাবেয়া খাতুন (২৩)। তিনি ওই গ্রামের মো. আবুল খায়েরের স্ত্রী। আবুল খায়ের রাজধানীর মিরপুর এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়াতেন। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। গৃহবধূর বাবার বাড়ি পাশের রাজীবপুর ইউনিয়নে।

আবুল খায়ের বলেন, এক বছর ধরে তাঁর স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে জিনে উত্ত্যক্ত করে আসছে। এ কারণে তাঁর স্ত্রী বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকতেন। পরে ময়মনসিংহ নগরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসা চলমান ছিল। তিনি আরও বলেন, শনিবার ফজরের নামাজ পড়ার জন্য রাবেয়া খাতুন ঘর থেকে বের হন। কিন্তু নামাজের সময় ঘনিয়ে আসার পরও স্ত্রী না ফেরায় তিনি দুই বাচ্চাকে বিছানায় রেখে বাড়ির সামনের অংশে খুঁজে দেখেন। পরে শৌচাগারে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। পরীক্ষা করে দেখতে পান তাঁর স্ত্রীর শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে না। তখন তিনি বাড়ির অন্যদের ডাকেন।

রাবেয়া খাতুনের মা–বোনও বিশ্বাস করেন তাঁকে জিনে মেরে ফেলেছে। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে মেয়েকে দেখতে আসেন মা সফুরা খাতুন (৫৫)। তিনি বলেন, তাঁর মেয়েকে এত দিন জিনে খুব কষ্ট দিয়েছে। মেয়ে তাঁকে বেশ কয়েকবার জিনের দেওয়া কষ্টের কথা বলেছে। তিনিও বিশ্বাস করেন, জিনই তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে সফুরা খাতুন বলেন, মেয়ের মৃত্যুতে তিনি কষ্ট পেয়েছেন। তবে তাঁর মেয়ে এখন জিনের যন্ত্রণার ঊর্ধ্বে চলে গেছে ভেবে তিনি চিন্তামুক্ত হয়েছেন। বড় বোন খাদিজা খাতুনও তাঁর বোনকে জিনে মেরে ফেলেছে বলে বিশ্বাস করেন।

ঈশ্বরপুর গ্রামের কয়েক বাসিন্দা বলেন, বিভিন্ন কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, এ ধরনের ঘটনা অন্ধকার যুগে ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানের এ যুগে জিনে মানুষ মেরে ফেলার গল্প অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। তবে গৃহবধূর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রে তাঁর ‘স্পন্ডেলাইটিস’ ও ‘ট্রমাটাইজ’ হওয়ার লক্ষণ ছিল বলে উল্লেখ করা রয়েছে।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, গৃহবধূর লাশের সুরতহাল করার সময় গলায় দাগ পাওয়া গেছে। আবার গৃহবধূর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রে গলায় কলার বোন ব্যবহারের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা রয়েছে। তাই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ময়নাতদন্তের জন্য গৃহবধূর লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।