কুমিল্লা মেডিকেলে চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউন, চরম ভোগান্তিতে রোগীরা
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নসহ অন্যান্য চিকিৎসকেরা পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মবিরতি পালন করেছেন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতালের বহির্বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগগুলো ছিল পুরোপুরি বন্ধ (কমপ্লিট শাটডাউন)। এতে দুরদুরান্ত থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কর্মবিরতি পালন করে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন চিকিৎসকরা। এ সময় চিকিৎসকরা পাঁচটি দাবি বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতিত কেউ ডাক্তার উপাধি ব্যবহার করতে পারবে না। ওটিসি ড্রাগস লিস্ট আপডেট করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসন করতে হবে। মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও নিন্মমানের মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে হবে। চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। একই দাবিতে আগামীকাল বুধবারও একই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পাঁচ দফা দাবির বাইরে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার-সংক্রান্ত রিটের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজশিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ১২ মার্চ এ রায় ঘোষণার তারিখ রয়েছে। মূলত এই রায়কে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার থেকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। কুমিল্লা ছাড়াও আশপাশের পাঁচ-ছয়টি জেলা থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। আজ সকালে ইন্টার্নসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা বহির্বিভাগের ফটকে তালা বুলিয়ে দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করে। এদের চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েন দূরদূরান্ত থেকে আগত রোগীরা।
এর আগে গতকাল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নিশাত সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিবৃতিতে জানানো হয়, সারা দেশে সব মেডিকেল কলেজের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে পূর্ণাঙ্গ রায় ও পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ১০ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং ট্রেইনি চিকিৎসকরা কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব সরকারি চিকিৎসককে নিজ নিজ বিভাগের সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। উল্লেখ্য যে, জরুরি সেবা (অবস ভর্তি, ক্যাজুয়েলিটি, সিসিইউ, আইসিইউ) চলমান থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মো.শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, আজসহ দুইদিন এই কর্মসূচি পালন করেছেন ইন্টার্নসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা। আগামীকাল বুধবারও একই কর্মসূচি পালন করা হবে। যেই সময়টাতে মানুষ চিকিৎসা নেয়, আজ সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগগুলো ছিল কমপ্লিট শাটডাউন। এ কারণে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষজন সমস্যায় পড়েছেন। তবে জরুরি বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগ চালু ছিল।
বহির্বিভাগে জেলার মনোহরগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আঞ্জুমান আক্তার বলেন, ‘এটা কেমন কথা। রোগীদের জিম্মি করে আন্দোলন করছে চিকিৎসকরা। এভাবে আর কতদিন চলবে? শত শত মানুষ চিকিৎসার জন্য এসে উল্টো দুর্ভোগে পড়েছেন।’
চাঁদপুরের শাহরাস্তি থেকে আসা নুরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার নাতিকে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখানোর জন্য। ১০টা দিয়ে টিকিট কেটে নাতিকে বড় ডাক্তার দেখাতে পারতাম। এখানে এসে দেখলাম ডাক্তাররা রোগী না দেখে মিছিল করছে। রোজা রেখে অনেক কষ্ট করে এসে এখন পড়লাম বিপদে। আমরা গরিব মানুষ যাব কোথায়? ডাক্তাররাও যদি রোগী না দেখে এমন কাজ করে তাহলে গরিব রোগীদের কী হবে?’