খানাখন্দ আর কাদাপানি জমে ভোগান্তি চরমে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার এ সড়ক সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থানের পিচঢালাই উঠে গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর-হরষপুর সড়কটি খানাখন্দ, ভাঙন ও গর্তে ভরে দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। সংস্কারের অভাবে সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। মানুষকে দুর্ভোগসহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়কের পাঁচগাঁও এলাকায় সম্প্রতি
ছবি: প্রথম আলো

সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিশাল এলাকাজুড়ে পিচঢালাই উঠে আছে। বৃষ্টি হলেই এসব এলাকা কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এমন খারাপ অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর-হরষপুর সড়কের। সড়কটির এই দুরবস্থার কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ৫০ হাজার মানুষ। খানাখন্দে ভরা থাকায় এ সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ সংস্কারকাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিপন ট্রেডার্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেসার্স পিন্টু কনস্ট্রাকশন যৌথভাবে এ কাজ পায়। তবে মূলত এই কাজ করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেসার্স পিন্টু কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মো. আতাউর রহমান।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে সড়ক সংস্কারকাজের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরুর পর গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সড়কের মির্জাপুর থেকে বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার কাজ শেষ করে আতাউর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় মির্জাপুর থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত নতুন পিচঢালাই করা অংশে অনেক জায়গা থেকে বিটুমিন ও পাথর আলাদা হয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সড়কের সংস্কারকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভালো মানের বিটুমিন এনে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কার করে তারপর আবার কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১০ দিন বন্ধ থাকার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবার কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত উপজেলার মির্জাপুর থেকে বাগদিয়া পর্যন্ত প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশে রাস্তার সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। তবে দুই মাস ধরে সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, উপজেলার ইছাপুরা, হরষপুর ও পাহাড়পুর হরষপুর ইউনিয়ন এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর, বহরা ও চৌমুহনী ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করে। তা ছাড়া উপজেলা পরিষদ, থানাসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যালয় এ সড়কের পাশে অবস্থিত। এসব কারণে সড়কটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সড়কের পাইকপাড়া, বাগদিয়া, পাঁচগাঁও, হাজীপুর, সোনামুড়া এলাকায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের বাগদিয়া থেকে হরষপুর দেওয়ান বাজার পর্যন্ত সড়কে ধুলা ওড়ে এবং বৃষ্টি হলে কাদামাটির কারণে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সারোয়ার রহমান ভূইয়া বলেন, ‘ভাঙাচোরা এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। সড়কের মেকাডম উঠে মাঝখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ওই সব গর্তে পানি জমে যায়। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে কার্পেটিং করতে পারছি না। এ জন্য দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। ৬ দশমিক ২ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার কাজ শেষ করেছি। বাকি দুই কিলোমিটারের জন্য পাথরসহ সরঞ্জাম প্রস্তুত আছে।’

বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান ভূইয়া রাস্তার বেহালের কথা স্বীকার করে বলেন, তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ হয়েছে। কার্পেটিং করতে বিলম্ব করায় মেকাডম নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কের আড়াই কিলোমিটার মেকাডমসহ কার্পেটিং, কয়েকটি দেয়াল, ২৭০ মিটার সিসি ঢালাইয়ের কাজ বাকি রয়েছে। এসব সংস্কারের সময় খানাখন্দ আর গর্তের অংশ মেরামত করা হবে। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দুই মাস ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত ঠিকাদারের তহবিলের সংকট রয়েছে।