দুই বছরে সেতুর কাজ শেষ হয়নি, দুর্ভোগে মানুষ

তহবিল–সংকট ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে বালিয়াকান্দির কালীর মোড় এলাকায় সেতুর কাজ বন্ধ ছিল।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের কালির মোড় এলাকায় পাইলিং করার পর সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। গত বুধবার তোলা ছবিপ্রথম আলো

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের কালীর মোড় এলাকায় একটি সেতু নির্মাণকাজের মেয়াদ গত অক্টোবরে শেষ হয়েছে। কিন্তু ওই কাজ এখনো শেষ হয়নি। ৯ মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। যথাসময়ে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় এবং সেতু নির্মাণের জন্য সড়ক কেটে রাখায় ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ১৩ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেতুর কাজ যথাসময়ে শেষ হয়নি। তবে ঠিকাদার বলছেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং বিল না পাওয়ায় তাঁরা কাজ বন্ধ রেখেছেন এবং যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারেননি।

স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জঙ্গল ইউনিয়নের কালীর মোড় এলাকার ভাটি খালের ওপর একটি ছোট পাকা সেতু ছিল। ২০২১ সালে ওই স্থানে ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি বড় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এই সেতুর চুক্তিমূল্য ২ কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ টাকা। কাজের দায়িত্ব পেয়েছে ঝিনাইদহের মদনমোহন পাড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন ট্রেডার্স। মেসার্স লিটন ট্রেডার্সের পক্ষে কাজ করছেন রাজবাড়ীর ঠিকাদার সঞ্জয় কুমার চৌধুরী ওরফে রতন চৌধুরী। সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১ এপ্রিল। গত বছরের ১ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তহবিল–সংকটের কারণে গত বছরের জুন মাসে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, জঙ্গল ইউনিয়নের কালীর মোড় এলাকায় ভাটি খালের পূর্ব পাশে পুরোনো ঘুরঘুরিয়া। পাশ্চিম পাশে নতুন ঘুরঘুরিয়া। এই অংশে সেতু নির্মাণের জন্য পাকা রাস্তার কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছেন। সেতু নির্মাণের স্থানে পাইলিং করে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় পুরোনো ঘুরঘুরিয়া, ঢোলজানি, পারুলিয়া, ভিমনগর, মহারাজপুর, আখশুকনা, সাধুখালী, পূর্ব মৌকুরি, নতুন ঘুরঘুরিয়া, অভয়নগর, বন্যতৈল, আখপোটরা ও জঙ্গল গ্রামের ১০ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা বেদানা মন্ডল বলেন, ১০ মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। সেতুর এপারের দিকে পাকা রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে লোকজন যাতায়াত করেন। মাঝেমধ্যে রাস্তা থেকে গর্তে পড়ে আহত হন। শিশুরা নিচের দিক থেকে ওপরে উঠতে পারে না।

ঠিকাদার সঞ্জয় কুমার চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সাত–আট মাস পেমেন্ট বন্ধ ছিল। এতে কাজ বন্ধ ছিল। চার-পাঁচ দিন ধরে কাজ শুরু হয়েছে।’ কিন্তু গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কালীর মোড় এলাকায় শ্রমিক না পাওয়ার কথা জানালে তিনি বলেন, ‘হয়তোবা তারা লাঞ্চ করতে গিয়েছিল। কাজ চলমান রয়েছে।’

উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার রাহাত ফেরদৌস বলেন, ‘ প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর ফান্ড ছিল না। এ কারণে কাজ ৯ মাস বন্ধ ছিল। ইতিমধ্যে ফান্ড কিছুটা এসেছে নির্মাণসামগ্রী নিয়ে আসা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’