কুয়াশায় ঢাকা চট্টগ্রাম, সূর্যের দেখা নেই

শীত নিবারণে আগুন পোহাচ্ছেন কয়েকজন। আজ সকালে নগরের খুলশীর আমবাগান এলাকায়ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম যেন আজ সোমবার ভোর থেকেই এক ধূসর শহর। চারদিক ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা, আকাশে সূর্যের কোনো চিহ্ন নেই। কনকনে শীত নগরজীবনে এনে দিয়েছে জড়তা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ হাফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, আগামী কয়েক দিন চট্টগ্রামে সকাল ও রাতের দিকে কুয়াশা ঘন থাকতে পারে। সেই সঙ্গে শীতের তীব্রতা থাকারও আশঙ্কা রয়েছে।

আজ সকালে ঘুম ভাঙতেই অনেকেই টের পেয়েছেন শীতের দাপট। তাই ঘর ছাড়ার আগে গরম কাপড়ের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। রাস্তায় নেমে দেখা যায়, কুয়াশার কারণে ঝাপসা হয়ে আছে দূরের ভবন ও গাছপালা। ভোরে যানবাহন চলাচল ছিল বেশ ধীরগতির।

নগরের বিভিন্ন এলাকায় খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টটা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভাসমান শ্রমিক, পথশিশু আর দিনমজুরদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে শীতের সঙ্গে লড়াই করছেন।

নগরের মোমেনবাগ এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিকের কাজ করছেন রফিক উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ছয়টা থেকে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। সকালে যখন ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল চারপাশ। তবু জীবিকার তাগিদে তীব্র ঠান্ডায় বের হতে হয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জাহেদুল আলম প্রায় প্রতিদিনই ভোরে হাঁটতে বের হন; কিন্তু গত কয়েক দিন শীতের তীব্রতায় ঘর থেকে বের হননি। জাহেদুল প্রথম আলোকে বলেন, শীতের শুরুর কয়েক দিনের মধে৵ তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগতে শুরু করেছেন। আর গত কয়েক দিন বেশি শীত পড়ায় আর ভোরে বের হননি।

শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, এ বছর শীতের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। আগের দিনের চেয়ে কুয়াশা আজ আরও ঘন। সূর্যের দেখা না মেলায় ঠান্ডার অনুভূতিও যেন বেড়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাবেই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই বলয়ের বর্ধিতাংশ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামে সাধারণত শীত কম থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানে ঘন কুয়াশার প্রবণতা বাড়ছে। বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা বৃদ্ধি, বাতাসের গতিপথে পরিবর্তন এবং উত্তর দিক থেকে আসা শীতল বায়ুর প্রবাহ—সব মিলিয়েই এই কুয়াশাচ্ছন্ন ও ঠান্ডা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সূর্যের আলো বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দিনের বেলাতেও শীতের অনুভূতি থেকে যাচ্ছে।

অধ্যাপক অলক পাল আরও বলেন, এ ধরনের আবহাওয়া সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলছে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষকে। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য এই শীত ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। নানা ধরনের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।

অবশ্য নগরের হাসপাতালগুলোতেও ঠান্ডার প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য, গত কয়েক দিনে সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও হাঁপানির সমস্যা নিয়ে অনেক মানুষ হাসপাতালে আসছেন। শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিনই ঠান্ডাজনিত উপসর্গ নিয়ে রোগী ভিড় করছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে এসব রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। শীত থেকে বাঁচতে গরম কাপড় ব্যবহার, ভোর ও রাতের ঠান্ডা এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে।