কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে কক্সবাজার ফিরে অনুসারীদের নিয়ে মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি সমাবেশ করেছেন মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে তাৎক্ষণিক এই সভায় কক্সবাজার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য কর্মসূচিতে ছিলেন।
আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরপর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হকসহ দলের সাতজন নেতা। মাসেদুল হক দলের মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। মেয়র মুজিবুর রহমান এ পর্যন্ত নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। এ নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলছেন না।
সড়কপথে ঢাকা থেকে গতকাল রাত সোয়া আটটার দিকে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছান। এ সময় কয়েক হাজার মানুষ তাঁকে বরণ করে নেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। সেখানে ফুলের মালা পরিয়ে একটি ছাদখোলা গাড়িতে মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে ওঠানো হয়। এরপর গাড়ির বহর বাইপাস সড়ক, সৈকতের কলাতলী সড়ক হয়ে শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে এসে থামে। সেখানে আগে থেকে লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালোবেসে এবং বিশ্বাস করে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা, স্মার্ট কক্সবাজার পৌরসভা নির্মাণে নিজের ভূমিকার কথা তুলে ধরে মাহবুবুর রহমান বলেন, এ জন্য দরকার সবার আন্তরিক সহযোগিতা। এ সময় তিনি নৌকায় ভোট চান।
সমাবেশে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার বলেন, মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছে প্রিয় ব্যক্তি, গ্রহণযোগ্যতাও অনেক। প্রধানমন্ত্রী সব দিক বিবেচনা করে মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে দলের মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁকে নির্বাচিত করার দায়িত্ব সবার।
সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এখন তিনি মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। সভায় নুরুল আবছার বলেন, মাহবুবুর রহমান যোগ্য প্রার্থী, এ জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁকে নৌকার মাঝি করেছেন। সবার উচিত ভেদাভেদ ভুলে একজোট হয়ে কক্সবাজারের উন্নয়নে মাহবুবুর রহমানকে নির্বাচিত করা।
মাহবুবুর রহমানের ওই সমাবেশে জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতার দেখা পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন নেতা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দলের দুজন সংসদ সদস্য জাফর আলম (চকরিয়া-১ আসন) ও সাইমুম সরওয়ারের (কক্সবাজার-৩ আসন) বিরোধ রয়েছে। এখন মাহবুবুরের পক্ষে সাইমুম ও আবছার মাঠে নামায় দলের বিভেদ দেখা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। অন্য নেতারাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মেয়র পদের জন্য কেন্দ্রের কাছে যে কয়েকজনে নাম পাঠিয়েছিলেন, তার ১ নম্বরে ছিল মুজিবুর রহমানের নাম। কিন্তু দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে দলের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন। মনোনয়ন না পেলেও মুজিবুর রহমানকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে হবে। যেহেতু তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।