‘আমরা এবার নোনাপানি উত্তোলনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ’

লবণ পানি তুলে চিংড়ি চাষ বন্ধ ও মজবুত বেড়িবাঁধের দাবিতে গণমিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা গ্রামে রোববার
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা ইউনিয়ন মহেশ্বরীপুর। ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ জমিতে বেড়িবাঁধ কেটে অপরিকল্পিতভাবে লবণপানি তুলে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। এসব লবণপানির চিংড়িঘের বন্ধ করার দাবি জানিয়ে রোববার গণমিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শত শত নারী-পুরুষ।

বিকেল চারটায় মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন সড়কে ওই গণমিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। লবণপানির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সুন্দরবন-সংলগ্ন এই উপকূলীয় এলাকায় কৃষিজমিতে লবণপানি তুলে চিংড়ি চাষ করায় দিন দিন এসব জমি ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য কাঁধ কাটা ও ছিদ্র করায় বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। আগে নদীর পানি বাঁধ থেকে অনেক দূর দিয়ে প্রবাহিত হতো। এখন নদীর পানি সরাসরি বাঁধের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে বারবার বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। এ অবস্থায় মানুষ জীবন-জীবিকা হারিয়ে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। নদীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। কাজ না থাকায় অনেকে এলাকা ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন অন্য জায়গায়।

বক্তারা আরও বলেন, কয়রা উপজেলায় লবণপানির চিংড়িঘের আছে প্রায় ৪ হাজার ২০০টি। যার আয়তন ৫ হাজার ৮০০ হেক্টরের কাছাকাছি। বেড়িবাঁধ কেটে ও পাইপ বসিয়ে নদী থেকে চিংড়িঘেরে লবণপানি তোলার ব্যবস্থা করেন ঘেরমালিকেরা। এতে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অল্প জোয়ারেও বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। তাই তাঁরা এসব ঘের বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা সমরেশ মণ্ডল বলেন, ‘এলাকার অধিকাংশ মানুষ আবার তাঁদের পূর্বপুরুষের পেশা কৃষিকাজের দিকে ঝুঁকে পড়তে চান। এ কারণে আমরা এবার নোনাপানি (লবণাক্ত) উত্তোলনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। তারপরও এলাকার অল্প কয়েকজন বাঁধ কেটে আবারও নোনাপানি তোলার পাঁয়তারা করছে।’

মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন লবণপানি বিরোধ কমিটির সভাপতি বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল এতে সভাপতিত্ব করেন। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন লবণপানি বিরোধ কমিটির সহসভাপতি পঙ্কজ কুমার সরদার, সাধারণ সম্পাদক মনজিত কুমার, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য অচিন্ত কুমার মণ্ডল প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কয়রা নদী। নদী পেরোলেই সুন্দরবন। নদীর তীর ধরে এঁকেবেঁকে চলে গেছে বেড়িবাঁধের মাটির রাস্তা। রাস্তার পাশে বিশাল বিলজুড়ে খণ্ড খণ্ড চিংড়িঘের। বেড়িবাঁধের রাস্তা ধরে সামনে অগ্রসর হলে চোখে পড়ে বাঁধ ছিদ্র করে বসানো ৫৩টি পাইপ। কিছু পাইপ দিয়ে নদীর লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে চিংড়িঘেরে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, হড্ডা গ্রামের বিলে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে দুই দশক ধরে নদী থেকে নোনাপানি টেনে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। তাঁর বাড়ির চারপাশে ঘেরের নোনাপানি। বাড়ি থেকে বের হতেও সমস্যা হয়। বাড়ির জমির গাছপালাও লাল হয়ে মরে গেছে। এমনকি লবণপানি খেয়ে গবাদিপশুও মারা গেছে তাঁদের। এ নোনাপানির ঘেরের কারণে হাঁস-মুরগি আর কেউ পালন করেন না এ এলাকায়। মানুষও পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাঁরা চান, এসব নোনাপানির ঘের বন্ধ হয়ে যাক। এ জন্য তিনিও মিছিল ও মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন।