শতাধিক পরিবারের চাল আটকে আছে ‘বিরোধে’

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের শতাধিক উপকারভোগীর কার্ড আটক রেখেছে ইউপি কর্তৃপক্ষ।

কেসমত-হরিশংকরপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করেন। পরিবারে পাঁচজন সদস্য আছেন। তাঁদের জন্য মাসে ৬০ কেজি চাল দরকার। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজির চালের কার্ড রয়েছে তাঁর। মাসে ৩০ কেজি চাল পান, বাকিটা বাদাম বিক্রির টাকায় কেনেন। এভাবে টেনেটুনে সংসার চালান। তাঁর সেই চালের কার্ড আটকে দিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কর্তৃপক্ষ।

অন্যের জমিতে কাজ করেন হরিশংকরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম। তিনিও ১৫ টাকা কেজি দরের চালের কার্ডধারী। তাঁর কার্ডটিও দেওয়া হচ্ছে না। রফিকুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের মতো শতাধিক সুবিধাভোগীর কার্ড আটক দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সবার বাড়ি ঝিনাইদহের সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নে।

কার্ড আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীরা বলেন, হরিশংকরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মাসুমের সমর্থক হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁদের কার্ড আটকে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই চাল দেওয়া হবে। এখন যদি তাঁদের কার্ড ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে তাঁরা আর এ মাসের চাল পাবেন না। এতে সংসার চালাতে তাঁদের ভীষণ কষ্ট হবে। এ বিষয়ে গত রোববার তাঁদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

একাধিক উপকারভোগী জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির হরিশংকরপুর ইউপির ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক উপকারভোগীর কার্ড জমা নিয়েছে ইউপি কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে কিছু কাজ থাকার কথা বলে সবার কার্ড জমা নেওয়া হয়। কিন্তু কিছু উপকারভোগীর কার্ড জমা নেওয়ার পরপরই ফেরত দেওয়া হয়েছে, আর শতাধিক ব্যক্তির কার্ড গত এক সপ্তাহেও ফেরত দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন কার্ড ফেরত চেয়ে ইউপি কার্যালয়ে গেলে সচিব তাঁদের এখনই কার্ড দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কার্ড না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইউপি সচিব তাঁদের বলেছেন, কার্ড নিয়ে সমস্যা আছে। কিন্তু কী সমস্যা, তা বলছেন না।

ইউনিয়নের চন্দ্রজানী গ্রামের ভ্যানচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর পরিবারে চারজন সদস্য। এই কার্ডে মাসে ৩০ কেজি চাল পান। বাকিটা কিনতে হয়। তারপরও কম দামে চাল পেয়ে বেঁচে আছেন। আনুমানিক এক সপ্তাহ আগে ইউপির সচিব তাঁদের খবর দেন অনলাইনে কার্ডের তথ্য হালনাগাদের কিছু কাজ রয়েছে। এ কারণে জমা দিতে হবে। এরপর তিনি নিজে ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে জমা দিয়েছেন। পরদিন অন্যরা কার্ড ফেরত পেয়েছেন শুনে পরিষদে যান। কিন্তু তাঁর কার্ডটি দেওয়া হয়নি। বলা হচ্ছে, তাঁর কার্ডে সমস্যা আছে।

এ বিষয়ে হরিশংকরপুর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল বারী জানান, তাঁর ওয়ার্ডের কার্ড জমা দিয়ে ফেরত পাচ্ছেন না কমপক্ষে ৩০ জন। আর ফেরত না পাওয়ার ভয়ে জমা দেননি আরও ৪০ জন। এখন তাঁদের সবার চাল পাওয়া নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হবে।

ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যের মনিরুল ইসলাম জানান, তাঁর ওয়ার্ডের কমপক্ষে ২০ জন রয়েছেন, যাঁদের কার্ড দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া তাঁর জানার বাইরেও অনেকের কার্ড ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। ১০-১২ জন আছেন, যাঁরা ভয়ে জমা দেননি। তাঁরা সবাই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মাসুমের সমর্থক। বর্তমান চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিষদের অন্যরা মিলে এ কাজ করেছেন।

হরিশংকরপুর ইউপির খন্দকার ফারুকুজ্জামান ফরিদ বর্তমানে ব্যক্তিগত কাজে ভারতে আছেন। এ কারণে সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের কার্ড ফেরত না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ইউপির সচিব মো. সাব্দার হোসেন জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের কার্ড নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে এ সমস্যা শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে। যাঁরা কার্ড পাননি, তাঁরা পেয়ে যাবেন। বর্তমান চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় একটু বিলম্ব হচ্ছে। সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের কার্ড ফেরত না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

সদরের ইউএনও এস এম শাহীন জানান, তিনি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।