নির্যাতন করে চুল কাটার পর শিশুর পরিবারকে মামলার ‘ভয় দেখালেন’ মেয়র

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের গোপালদী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হালিম সিকদার
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় নির্যাতন করে দুই শিশুর চুল কাটার পর তাদের একজনের পরিবারকে মামলার হুমকি দিয়েছেন পৌরসভার মেয়র। শিশুটির বাবা দাবি করেছেন, উপজেলার গোপালদী পৌর মেয়র হালিম সিকদার গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে লোক পাঠিয়ে ও মুঠোফোনে মামলার হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় ‘বাড়াবাড়ি’ করতে নিষেধ করেন তিনি।

তবে শিশুদের চুল কেটে দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন হালিম সিকদার। চুল কেটে দেওয়ার ঘটনাকে তিনি অন্যায় মনে করছেন না। তাঁর দাবি, শিশু তিনটি চুরির সঙ্গে জড়িত। তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্যই তিনি এমনটা করেছেন।

হালিম সিকদার আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গতকাল সকালে তাঁর তাঁত কারখানার লোহার শিকল চুরির অপবাদে ৭, ৮ ও ১১ বছর বয়সী তিন শিশুকে তিনি হাত বেঁধে গ্রাম ঘোরান। পরে ৮ ও ১১ বছর বয়সী দুই শিশুর চুল কেটে দেন। ভুক্তভোগী তিন শিশু স্থানীয় দুটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন

এই ঘটনার জেরে ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি’র আশঙ্কায় গতকাল বাড়ি ছেড়েছে ১১ বছরের শিশু ও তার মা। শিশুটির বাবা গ্রাম থেকে দূরে একটি মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসাশিক্ষক। তিনিও রাতে তাঁর কর্মস্থলে ছিলেন না।

এ ঘটনায় সাত বছর বয়সী শিশুর পরিবারে ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ আছে। আট বছর বয়সী শিশুর এক আত্মীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
১১ বছর বয়সী শিশুটির বাবার সঙ্গে আজ মঙ্গলবার সকালে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বিকেলে মেয়রের ভাই মনির সিকদার ও চাচাতো ভাই আফাজ উদ্দিনসহ ১২ জন লোক আমার বাড়িতে আসেন। এ সময় মনির সিকদারের মুঠোফোনে ফোন করে মেয়র আমার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়র এবং বাড়িতে আসা লোকজনের দাবি, আমার ছেলেসহ এই শিশুরা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল চুরি করেছে। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তিনি আমার সন্তান, স্ত্রী ও আমার বিরুদ্ধে চুরির মামলা করবেন।’

শিশুটির বাবা আরও বলেন, ‘এই ঘটনার পর এলাকায় গুঞ্জন ওঠে রাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই ভয়ে আমার স্ত্রী ও সন্তান বাড়ি ছেড়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। রাত নয়টার দিকে আমাকে ডেকে নেওয়ার জন্য আমার দুই আত্মীয়সহ মেয়রের লোক আমার কর্মস্থলে আসে। আমি তখন ভয় পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই।’

তবে হালিম সিকদারের দাবি এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘আমি কী অন্যায়টা করসি, সেটা ওরে জিজ্ঞেস করতে আমার ভাইকে ওর বাড়িতে পাঠাইসিলাম। কোনো হুমকি কিংবা মামলা করার প্রশ্নই ওঠে না।’

এ বিষয়ে গতকাল রাতে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওই শিশুদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছি। তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কোনো চাপের মুখে ভয় পেয়ে তাঁরা এমনটা বলছেন কি না, তা জানতে আমরা প্রয়োজনে আজ সরেজমিনে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করব।’

এ দিকে এ ঘটনায় গতকাল দিবাগত রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন আড়াইহাজার থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) খাদেমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকেই মামলা হয়নি। শিশু নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করতে রাতে একটি অভিযান হয়েছিল। কাউকে আটক করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আজ সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’