পা দিয়ে লিখে জিপিএ–৪.৫৭ পেয়েছেন রাজবাড়ীর হাবিবুর

পা দিয়ে লিখে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৫৭ পেয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় পা দিয়ে লিখে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৫৭ পেয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান। তিনি পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এবারের আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ ফল অর্জন করেন।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক আবদুস সামাদের ছেলে।

হাবিবুরের ছোট বোন মরিয়ম খাতুন জানায়, তারা চার ভাইবোন। ভাইবোনদের মধ্যে হাবিবুর তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্ম থেকেই ভাইয়ের হাত নেই। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি তাঁর খুবই ঝোঁক ছিল। মা-বাবা ও স্বজনদের উৎসাহে তিনি পা দিয়ে লেখা শেখেন।

কালুখালীর হিমায়েতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু হাবিবুরের। প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে হাবিবুর পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। ২০১৯ সালে দাখিল পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৪.৬৩ পান। এরপর ভর্তি হন আলিম শ্রেণিতে।

হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে। আরও ভালো রেজাল্ট আশা করেছিলাম। কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। বাবা দরিদ্র কৃষক। কিন্তু আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। আমি দাখিল পরীক্ষায় পাস করার পর কৃষক লীগ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী ভাই আমাকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি দুই বছর আমাকে সহায়তা করেছেন। ওই টাকা দিয়ে আমি একজন বেতন ও যাতায়াতের খরচ মেটাতাম।’

হাবিবুর বলেন, ‘আমার ইচ্ছা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। পড়ালেখা শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করতে চাই।’

পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহমেদ বলেন, মাদ্রাসায় এবারের আলিম পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনজন শিক্ষার্থী। হাবিবুর মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁর বাবা দরিদ্র কৃষক। যাতায়াত করা তাঁর পক্ষে কষ্টকর। তাঁরা মাদ্রাসা থেকে সাধ্যমতো হাবিবুরকে সহায়তা করেছেন। ভবিষ্যতেও হাবিবুর ভালো ফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক বলেন, ‘পা দিয়ে লিখে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা খুবই কঠিন। অনেকেই সুস্থ শরীর নিয়ে পরীক্ষা দিয়েও ফেল করে। পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ে। কিন্তু হাবিবুর পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। ভালো ফল করছে। আমি তার এই ফলে খুবই খুশি। হাবিবুর যত দিন পড়ালেখা চালিয়ে যাবে, আমি পাশে থেকে তাকে সহায়তা করব।’