ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় সরকারি ভবন করতে ভরাট করা হচ্ছে সরকারি পুকুর

পুকুরটি ভরাট শুরু করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে সরব হয়েছেন। নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে।

নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের ভেতরে একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার পরিষদের জন্য নতুন একটি আটতলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ভবনটি নির্মাণের জন্য ভরাট করা হচ্ছে উপজেলা পরিষদের ভেতরে থাকা একটি পুরোনো পুকুর। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলছেন, নতুন ভবনের জন্য চত্বরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এ পুকুর ভরাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পুকুরটি ভরাটের কাজ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা চলছে মুক্তাগাছা ও ময়মনসিংহের সচেতন মানুষের মধ্যে। পুকুরটি ভরাট শুরু করায় উপজেলার অনেক বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন। ময়মনসিংহের বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও পরিবেশবাদী সংগঠন একযোগে আজ বুধবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে পুকুরটি ভরাট করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন–১৯৯৫ অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা এর শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুকুরটির বয়স অন্তত ৫০ বছর। এর আয়তন প্রায় এক একর। ১০ দিন আগে পুকুরটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে ভরাটের কাজ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের ভেতর গিয়ে দেখা যায়, পুকুরটির এক পাশে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। তবে গতকাল ভরাটের কাজ হচ্ছিল না। এর আগে গত শনিবার দুপুরে কয়েকজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়।

শনিবার কাজ তদারক করার সময় এক ব্যক্তি নিজের পরিচয় না দিয়ে বলেন, ‘আমরা পুকুরটি ভরাটের কাজ পেয়েছি। তাই ভরাট করে দিচ্ছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’ তিনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামও বলেননি। পুকুরের কতটুকু অংশ ভরাট করা হবে, জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি পুকুরের পানিতে দুটি খুঁটি দেখান। সে হিসাবে পুকুরটির বেশির ভাগ অংশই ভরাট করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই আকন্দ মুঠোফোনে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের উন্নয়নের স্বার্থে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েই পুকুরটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়েছে। বিকল্প স্থান না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। পুকুর ভরাট করা আইনে নিষিদ্ধ হলেও জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার সেটি ভরাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সে ক্ষমতায় পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে।’

স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে জলাশয় ভরাটের বাধানিষেধ শিথিল করা যেতে পারে। কিন্তু একটি নতুন ভবন নির্মাণ কীভাবে অপরিহার্য বিষয় হয় যে একটি প্রাচীন পুকুর ভরাট করতে হবে? স্থান বা নকশা পরিবর্তন করে পুকুরটি রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা।

মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ ঘোষ বলেন, পুকুর ভরাট আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। এটি ভরাট না করার দাবি জানান তিনি। পুকুর ভরাটের আগে পরিবেশ সচেতন ও এলাকার মানুষের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।

গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, পুকুর ভরাট করা বিষয়টি উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত। উপজেলা পরিষদ সভা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি যতটুকু জানেন, পুকুরটি ভরাট না এটি সংস্কার করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের আটতলা ভবন নির্মাণের জন্য পুকুরটির একটি অংশ ভরাট করা হবে। যে পাশে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে এর বিপরীত পাশে আবারও খনন করে দেওয়া হবে।

পুকুর ভরাট আইনগত নিষিদ্ধ, এ প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, এটি উপজেলা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন। কারণ, তিনি উপজেলা পরিষদের সভাপতি।

ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠন ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, মুক্তাগাছায় পুরোনো পুকুরটি ভরাটের খবর জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করে তাঁরা আপত্তির জানিয়েছেন, যেন পুকুরটি ভরাট করা না হয়। পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে বুধবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন তাঁরা।