দুই যুগ পর ধর্ষণ মামলায় খালাস পেয়ে বৃদ্ধ দরছ মিয়া বললেন, ‘আজ নতুন জীবন পেয়েছি’

দরছ মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় হবিগঞ্জের আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন ৮৬ বছরের দরছ মিয়া। দীর্ঘ দুই যুগ আইনি লড়াইয়ের পর মুক্তি পেয়ে দরছ মিয়া বলেন, ‘এত দিন পরিবার-প্রতিবেশীদের কাছে ছোট হয়ে ছিলাম। মামলা চালতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে গেছি। ভাবতাম, মিথ্যা অপবাদ নিয়েই হয়তো আমাকে মরতে হবে। আজ মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেয়েছি।’

দরছ মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবলের পুটিজুরী ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামে। পেশায় তিনি একজন কৃষক। তাঁর বয়স যখন ৬২, তখন প্রতিবেশী এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

গত মঙ্গলবার বিকেলে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক সুদীপ্ত দাস এ মামলার দায় থেকে তাঁকে বেকসুর খালাস দেন। পাশাপাশি মামলার বাকি দুই আসামিও খালাস পেয়েছেন।

নাতি-নাতনিরা সব সময় জানতে চাইত, কী মামলায় তিনি ২৪ বছর ধরে হবিগঞ্জ আদালতে আসা-যাওয়া করছেন? এর উত্তর তিনি দিতে পারতেন না।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মাসুম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় চিকিৎসক প্রতিবেদনে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বাদীর ১২ জন সাক্ষীর কেউ সাক্ষ্য দেননি। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত দরছ মিয়াসহ তিনজনকেই এ মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ১৮ জুলাই হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামে ধর্ষণের অভিযোগে এক নারী (তখন বয়স ছিল ২৭) আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। দরছ মিয়া, তাঁর খালাতো ভাই একই উপজেলার মণ্ডলকাঁপন গ্রামের বুলু মিয়া ও চকমণ্ডল গ্রামের ইমান উল্লাহকে আসামি করা হয়।

মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেন, ঘটনার রাতে তিনি টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলে তিন আসামি তাঁকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। মামলায় অপর দুই আসামি শুরু থেকে পলাতক থাকলেও দরছ মিয়া আইনি লড়াই করে আসেন ২৪ বছর ধরে।

দরছ মিয়ার পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে। পরিবারে আরও আছে ১২ জন নাতি-নাতনি। তিনি বলেন, নাতি-নাতনিরা সব সময় জানতে চাইত, কী মামলায় তিনি ২৪ বছর ধরে হবিগঞ্জ আদালতে আসা-যাওয়া করছেন? এর উত্তর তিনি দিতে পারতেন না।

দরছ মিয়া বলেন, তাঁর বয়স ৮৬ চলছে। কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। মামলার বাদীর স্বামীর সঙ্গে আগে থেকে নানা বিষয় নিয়ে তাঁর বিরোধ চলে আসছিল। তাকে ফাঁসানোর জন্যই সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছিল।

আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল হাসান বলেন, ২০০১ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশ ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। মামলা চলমান অবস্থায় দুই বছর আগে আসামি বুলু মিয়া মারা যান।