হাসপাতালে থাকা যমজ শিশুরা যাবে ছোটমণি নিবাসে, মা যাবেন আশ্রয়কেন্দ্রে
যশোর জেনারেল হাসপাতালে থাকা এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী ও তাঁর যমজ সন্তানদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র নেওয়া হচ্ছে। দুই শিশুকে পাঠানো হচ্ছে খুলনা ছোটমণি নিবাসে আর তাদের মায়ের ঠাঁই হচ্ছে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে। আজ সোমবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পুলিশের আবেদনের শুনানিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১–এর বিচারক বিষয়টি নিষ্পত্তি করার বিষয়ে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডকে দায়িত্ব দেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক অসীত কুমার সাহা বলেন, ১৫ দিন ধরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে যমজ সন্তান ও তাদের মা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যমজ দুজনের মধ্যে একজন ছেলে, অন্যজন মেয়ে। তাঁরা সবাই সুস্থ আছে। কিন্তু তাঁদের দায়িত্ব নিতে স্বজনদের কেউ রাজি হননি। এতে ওই মা ও তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই শিশুকে ছোটমণি নিবাসে ও তাদের মাকে ঢাকা কাশিমপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অসীত কুমার সাহা আরও বলেন, জন্মের পর এক দিন বয়স থেকে ছয় বছর পর্যন্ত শিশুদের সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছোটমণি নিবাসে ও ছয় বছরের পর থেকে সরকারি শিশু পরিবারে তাদের স্থানান্তর করা হবে। আর মেডিকেল বোর্ডের সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে তাদের মাকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্তের চিঠি এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে টেলিফোনে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। এখন চিঠি হাতে আসার পর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। ওই মেডিকেল বোর্ড ওই প্রসূতি মা মানসিক ভারসাম্যহীন কি না, তা যাচাই-বাছাই করে সনদ প্রদান করবে। ওই সনদের ভিত্তিতে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, যমজ দুই শিশুকে দেখাশোনা করার জন্য দুজন আনসার সদস্য রয়েছেন। তাঁরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান ও নিরাপত্তা দেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নতুন গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে ওই নারীকে স্থানীয় ব্যক্তিরা বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে মা ও দুই নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির সময় ওই নারীর পরিচয় জানা যায়নি। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে। ওই নারী খুলনার তেরখাদা উপজেলার বাসিন্দা। পিবিআই কর্মকর্তারা ওই নারীর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও সন্তানদের নিতে রাজি হননি। এই অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রসূতি মা ও দুই নবজাতকের দেখভাল করা হয়।