খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের আট প্রার্থী মাঠে

উপরে (বাঁ থেকে) কৃষ্ণ নন্দী, গোবিন্দ হালদার ও কিশোর কুমার এবং নিচে (বাঁ থেকে) অচিন্ত্য কুমার মন্ডল, সুনীল শুভ রায় ও প্রসেনজিৎ দত্তছবি: সংগৃহীত

হিন্দু-অধ্যুষিত খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের আটজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। টানা প্রায় তিন দশক এ আসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থীরাই সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের বাইরে থাকায় এবার ভোটের সমীকরণ কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই নজর স্থানীয় বাসিন্দাদের।

খুলনা-১ আসনে জামায়াতসহ মোট ছয়টি রাজনৈতিক দল হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে বিএনপির দুই নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য আমীর এজাজ খান। জামায়াত প্রথা ভেঙে ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করেছে। এর আগে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির শেখ আবু ইউসুফকে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল দলটি।

গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী ৮–দলীয় সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আরও দুটি দল যুক্ত হওয়ায় জোটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশে। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আসনভিত্তিক সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

খুলনার ছয়টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ১১ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের। এই ১১ জনের মধ্যে মাত্র দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকিরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনই খুলনা-১ আসনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৭৩ শতাংশই খুলনা-১ আসনে লড়তে চান।

জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে খুলনা-১ আসনে সবচেয়ে বেশি ১৩টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্তর্গত বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সুনীল শুভরায়, জাতীয় পার্টির মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, জামায়াতের কৃষ্ণ নন্দী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কিশোর কুমার রায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবু সাঈদ, জেএসডির প্রসেনজিৎ দত্ত, বিএনপির আমীর এজাজ খান, বাংলাদেশ মাইনরিটি জাতীয় পার্টির প্রবীর গোপাল রায়, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ফিরোজুল ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের জি এম রোকনুজ্জামান, বাংলাদেশ সম অধিকার পরিষদের সুব্রত মণ্ডলসহ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী গোবিন্দ হালদার ও চালনা পৌরসভার সাবেক মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এই ১৩ প্রার্থীর মধ্যে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে বিএনপির আমীর এজাজ খান, ইসলামী ফ্রন্টের সুনীল শুভরায় ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবু সাঈদের। এ ছাড়া সিপিবির কিশোর কুমার রায় সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাকোপ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল চালনা পৌরসভার মেয়র ছিলেন। বাকিরা স্থানীয়ভাবে তুলনামূলক কম পরিচিত।

বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ খান বলেন, ‘তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই এলাকার মানুষের পাশে আছি। হিন্দু-মুসলমান সব সম্প্রদায়ের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। জয়ের ব্যাপারে আমি পুরোপুরি আশাবাদী।’

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-১ আসনে ১৯৯১ সালের পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া বিএনপি কখনো জেতেনি। এরপর এখানে সব সময় সংখ্যালঘু প্রার্থী জিতেছেন। একসময় বাম দলের প্রভাব থাকলেও জামায়াতের অবস্থান সব সময় দুর্বল ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম বেড়েছে।

জামায়াতের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষের কাছ থেকেই তিনি ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন। খুলনা-১ আসনে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীকে ঘিরে আলোচনা প্রসঙ্গে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ধর্ম নয়; ন্যায়, ইনসাফ ও সুশাসনই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির মূল ভিত্তি। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও এই দর্শন সমর্থন করলে জামায়াতে যুক্ত হতে পারেন।

খুলনা-১ আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১১৯টি। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩ হাজার ৫৪২ জন। এ আসনে এবার পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। এখানে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৪২ জন আর নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৭ জন।