আইসিসিতে সাক্ষ্য দিতে আগ্রহীদের ডাকতে যাওয়া রোহিঙ্গা মাঝিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবির
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের ডেকে আনতে গিয়ে মো. এবাদুল্লাহ (২৭) নামের এক রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১ পশ্চিম) এ–৯ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত এবাদুল্লাহ এ-৯ ব্লকের রোহিঙ্গা পরিচালনা কমিটির সাব–মাঝির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি একই ব্লকের বাসিন্দা লাল মোহাম্মদের ছেলে। প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাঁকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবির পরিদর্শনে যান আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান। সাক্ষাৎকারের জন্য লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে ১৩ রোহিঙ্গা নারী–পুরুষকে জড়ো করা হয়। তাঁরা রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি আশ্রয়শিবিরে পৌঁছার আধা ঘণ্টা আগে এবাদুল্লাহকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, এবাদুল্লাহ সকাল নয়টার দিকে আশ্রয়শিবিরে এ-৯ ব্লকে গিয়ে রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এমন তিন রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেন। তাঁদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন, যাঁর স্বামীকে রাখাইনে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সমর্থক কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আইসিসির কাছে সাক্ষ্য দিতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে বাধা দেয়। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা এবাদুল্লাহকে পেট ও বুকে ছুরিকাঘাত করে। তাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবাদুল্লাহ। স্থানীয় রোহিঙ্গারা উদ্ধার করে আশ্রয়শিবিরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ছুরিকাঘাতে এবাদুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, তা জানা যায়নি। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১১ জন আরসার সদস্য, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্য ব্যক্তিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

পুলিশ জানায়, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) এইচ-৫৯ ব্লকে আশিক এলাহী (২৩) নামের এক রোহিঙ্গা তরুণকে হাত-পা বেঁধে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে আরসার সন্ত্রাসীরা আশিককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে। এর আগে ১৯ জুন সকালে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) মিয়ানমারের সশস্ত্র দুটি গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় ইমাম হোসেন (১৫) নামের আরেক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন মোহাম্মদ নুর (৪৭) নামের আরেক রোহিঙ্গা।