সজ্জিত রিকশায় প্রিয় শিক্ষককে বাড়িতে পৌঁছে দিলেন সহকর্মী-শিক্ষার্থীরা
৪৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করেছেন আবদুর রহিম। শেষ কর্মদিবসে সজ্জিত রিকশায় চড়িয়ে মোটরসাইকেলবহরে প্রিয় শিক্ষককে বাড়িতে পৌঁছে দেন তাঁর সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সূর্যতরুণ শিক্ষাঙ্গন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ওই শিক্ষককে বিদায় দেওয়া হয়। চাকরিজীবনের শেষ ছয় মাস তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ১৯৮১ সালের ৩ জানুয়ারি সখীপুর পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ‘সৃষ্টি সংঘ কিন্ডারগার্টেন’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। রহিম ১৯৮২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। এর চার বছর পর প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে রাখা হয় সূর্যতরুণ শিক্ষাঙ্গন। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি খোলা হয়। রহিম ওই প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক শাখার সহকারী বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে ৪৩ বছর শিক্ষকতা করেন। মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু নাসের ফারুক অবসরে গেলে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আজ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
আজ ওই শিক্ষকের বিদায় উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক রফিক-ই-বাদল, ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি তাহেরুল ইসলাম তালুকদার, সহকারী শিক্ষক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রহিম চাকরির নানা অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তাঁর কান্নায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে একটি সজ্জিত রিকশায় করে বিদ্যালয় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
বিদায়বেলা রহিম সাংবাদিকদের বলেন, এইচএসসি পাস করে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর বিএসসি পাস করেন। ৪৩ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তাঁর অনেক ছাত্র কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ চিকিৎসকসহ নানা সম্মানজনক পেশায় গেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কতটুকু দিতে পেরেছি, জানি না; তবে শিক্ষকতা করে আর্থিক উন্নয়ন করতে পারিনি। বিদায়বেলা সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা পেলাম, তা কখনো ভুলব না।’
অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, বিদায় খুবই কষ্টের ও বেদনার। শিক্ষক রহিম নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষার্থী এবং গ্রামবাসীর অশ্রুসিক্ত নয়ন তারই প্রমাণ। শিক্ষকতাজীবনের অনন্য অবদানের সুফল ও ভালো কর্মের পুরস্কার এটি।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মোটরসাইকেলবহর নিয়ে স্যারকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানকে স্যার অনেক কিছু দিয়েছেন। বিদায়বেলা আমরা কিছুই দিতে পারিনি। শুধু সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’