পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু তিনি

ঝালকাঠি শহরের সংগঠনের নাম ‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’। সংগঠনটির নেতৃত্বে আছেন শহরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সামসুল হক ওরফে মনু। চলতি বছর সংগঠনটির উদ্যোগে সদর উপজেলায় ১০ হাজার ফলের চারা বিতরণ করা হয়েছে।

সামসুল হক ওরফে মনু এক যুগ ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফলের চারা বিতরণ করছেন।
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠি সদরের বিচ্ছিন্ন জনপদ পোনাবালিয়ায়ায় আফছার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। গত ১৬ আগস্ট বৃষ্টিভেজা এক সকালে স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠনের সদস্যরা সুগন্ধা নদী পাড়ি দিয়ে ওই বিদ্যালয়ে হাজির হন। তাঁদের সবার গায়ে একই রঙের টি-শার্ট ও রেইনকোট। তাঁরা তিন শতাধিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, শরিফা, সফেদা ও মাল্টার চারা বিতরণ করেন।

ঝালকাঠি শহরের এ আলোচিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নাম ‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’। সংগঠনটির শতাধিক সদস্যের সবই বৃক্ষপ্রেমী। সংগঠনটির নেতৃত্বে আছেন শহরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সামসুল হক ওরফে মনু। শুধু পোনাবালিয়ায়ার আফছার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ই নয়, চলতি বছর সংগঠনটির উদ্যোগে সদর উপজেলার ২৫ বিদ্যালয় ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির ১০ হাজার ফলের চারা বিতরণ করা হয়েছে।

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটের যাত্রা শুরু দুই বছর আগে। তবে সংগঠনটির সভাপতি সামসুল হক এক যুগ ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফলের চারা বিতরণ করছেন। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রজাতির ১০ হাজার ফলের চারা বিতরণ করা তাঁর লক্ষ্য। এর অর্ধেকই থাকে উন্নত প্রজাতির আমের চারা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে চারাগুলোয় আম ধরে। তাঁর দেওয়া গাছের চারাগুলো ইতিমধ্যে বড় হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতেই এসব গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে।

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণের মৌসুম আসার আগে রাজশাহী, রংপুর ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির বিভিন্ন নার্সারি থেকে ফলের চারা সংগ্রহ করা হয়। পরে তালিকা করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ভেতর এ চারা বিতরণ করা হয়।

ঝালকাঠি পৌরসভার রামনগর এলাকার ইছানীল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ বছর আগে বিতরণ করা চারায় এখন আম ধরছে। ওই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে সামসুল হক ভাইয়ের বিতরণ করা আমের চারা নিয়ে বাড়িতে রোপণ করেছে। সেই গাছে তিন বছর ধরে আমের ফলন হচ্ছে। শুধু আমাদের বাড়িতে নয়, এলাকার অনেক বাড়িতেই তাঁর দেওয়া ফলের চারা বড় হয়ে ফল দিচ্ছে।’ 

সদর উপজেলার বিকনা সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামসুল হক তিন শতাধিক আমের গাছ বিতরণ করেছেন। তাঁর এই কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃক্ষরোপণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।’

পোনাবালিয়া ইউনিয়নের আফছার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন খান বলেন, ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটের পক্ষ থেকে বিতরণ করা ফলের গাছ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উৎসাহ নিয়ে বাড়িতে রোপণ করেছে। এ গ্রামে সামসুল হক ভাইয়ের আগের বিতরণ করা অনেক গাছে এখন ফল ধরতে শুরু করেছে।

ক্যাপ্টেন প্লানেটের সদস্য সাকিল হাওলাদার বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সামসুল হক ভাইয়ের নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যরা গাছের চারা বিতরণে অংশ নেন। সাধারণত ট্রলার কিংবা তাঁর ব্যক্তিগত স্পিডবোটে চড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে ফলের গাছ বিতরণ করা হয়।

গাছের চারা বিতরণের পাশাপাশি সামসুল হকের পাখির জন্য রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে পরিযায়ী পাখি শিকার বন্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে চর এলাকায় প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। ঝালকাঠি শহরের কাঠপট্টি এলাকায় নিজ বাসভবনে পাখির অভয়ারণ্য বানিয়েছেন। বাড়ির ছাদের কার্নিশে রয়েছে পাখিদের জন্য কাঠের তৈরি ঘর। গাছে গাছে রয়েছে মাটির হাঁড়ি। ফুলের বাগান আর বিভিন্ন ফলের গাছ। সেখানে পাখিরা বাসা বাঁধে। 

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটের সভাপতি সামছুল হক বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবুজ ঝালকাঠি গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফলের চারা বিতরণ করি। এতে ফল ও অক্সিজেন দুটোই পাওয়া যায়। গাছে বাসা বাঁধে পাখি। সেই পাকা ফল খায়। গ্রামের মানুষও দেশি ফল খেতে পারে।’ 

জেলা (রেঞ্জ) বন কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম বলেন, বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিবছর ঝালকাঠি সদরে গাছের চারা বিতরণ করা হয়। তবে এ বছর বিনা মূল্যে গাছের চারা দেওয়া হয়নি। সামসুল হক প্রতিবছর গাছ বিতরণ করায় বন বিভাগের ওপর কিছুটা চাপ কমেছে।