গোয়ালন্দে বিক্রি হলো মহাবিপন্ন বাগাড়, জানে না প্রশাসন

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, বাগাড় মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না থাকায় প্রায়ই বাগাড় শিকার করা হচ্ছে এবং প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রিও হচ্ছে। আজ সকালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট মাছবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট মাছবাজারে ৩০ ও ১৩ কেজি ওজনের দুটি মহাবিপন্ন প্রজাতির বাগাড় মাছ বিক্রি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনা থেকে মানিকগঞ্জ অঞ্চলের জেলেরা মাছ দুটি ধরার পর আজ শনিবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে নিলামে বিক্রি করেন। বড় বাগাড় মাছটি বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার টাকায়, ছোটটি ১৪ হাজারে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, এই মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না থাকায় প্রায়ই বাগাড় শিকার হচ্ছে এবং প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রিও হচ্ছে।

আজ সকাল ছয়টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট মাছবাজারে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি হচ্ছে সেখানে। এর মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, রিঠা, পাঙাশ ও বাগাড়। অন্যান্য দিনের তুলনায় বাজারে মাছের দাম অনেকটা চড়া।

নিলামে বড় বাগাড় মাছটি কিনেছেন ব্যবসায়ী মাসুদ মোল্লা। তিনি বলেন, প্রায় ২৯ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের বাগাড়টি নিলামে তাঁরা সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি দরে ৩৪ হাজার টাকায় কেনেন। কেজিপ্রতি ১০০ টাকা করে লাভ হলেই বিক্রি করবেন। তাঁরা পরিচিত লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। ১৩ কেজি ওজনের বাগাড়টি ১ হাজার ৫০ টাকা কেজি দরে স্থানীয় আরেকজন ব্যবসায়ী কিনেছেন।

বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, বাগাড় একটি সংরক্ষিত বন্য প্রাণী। বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বাগাড় মাছ তফসিলভুক্ত সংরক্ষিত বন্য প্রাণী। আইন অনুযায়ী, বাগাড় শিকার, কেনা ও বেচা দণ্ডনীয় অপরাধ।

রাজবাড়ী জেলা সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (রেঞ্জার) হুমায়ুন কবির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বন সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রকৃতি নিয়ে কাজ করে যে বিভাগ, তাদের প্রধান কার্যালয় খুলনায় অবস্থিত। যে কারণে মাঝেমধ্যে বাগাড় ধরার খবর পেলেও তারা সেখান থেকে কিছুই করতে পারে না।

গোয়ালন্দ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আপনাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপনের পর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী—এ সম্পর্কে তাঁদের জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি অধিকতর যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’