ইমরানের প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল

ইমরান হোসেন (১৮)
ছবি: সংগৃহীত

ইমরান হোসেনের (১৮) স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। সব পরীক্ষায় ভালো ফল করতেন তিনি। এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও কোনো ঘাটতি রাখেননি তিনি। কিন্তু তাঁর সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। গত বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে ইমরান অসুস্থ হয়ে যান। আজ রোববার ভোর সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

ইমরান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দশদোনা গ্রামের কবির হোসেনের একমাত্র ছেলে। ইমরান ঢাকার নটর ডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর চলমান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। স্বজনেরা বলেন, নটর ডেম কলেজের পাশে কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন ইমরান। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা দেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ইমরান। অসুস্থতার জন্য পরীক্ষার হলে বমিও করেন তিনি। তারপরও তিন ঘণ্টার পরীক্ষায় অংশ নেন।

শুক্রবার সকালে তাঁর শরীরের অবস্থার অবনতি হয়। পরে স্বজনেরা ঢাকায় পৌঁছে তাঁকে প্রথমে ঢাকার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার আরও অবনতি হলে পরে শাজাহানপুরের প্যান প্যাসিফিক হাসপাতালে ভর্তি করান। শনিবার তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর সাড়ে চারটার দিকে ইমরানের মৃত্যু হয়।

রোববার দুপুরে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দশদোনা গ্রামে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। স্বজনেরা বলেন, ইমরান ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পান তিনি। এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইমরান বড়। ছোট বোনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

ইমরান হোসেনের চাচা জাকির হোসেন জানান, ইমরান কখনো প্রাইভেট পড়েননি। এসএসসি পরীক্ষার আগে ইমরানকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, কার কার কাছে প্রাইভেট পড়বেন। তখন ইমরান বলেন, পাঠ্যবই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পাঠ্যবই পড়লে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। এর জন্য প্রাইভেট পড়তে হবে না। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকেরা যা যা পড়ান, সেটাই যথেষ্ট।

জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘ইমরানের সুগার বেড়ে গিয়েছিল। সে স্ট্রোক করেছিল। চেষ্টা করেও ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না।’

এদিকে ইমরানের মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর পুরোনো স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা তাঁর বাড়িতে ভিড় করেন। দশদোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাইনুদ্দিন জানান, ইমরান ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি এক দিনের জন্যও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতেন না। এমন একজন মেধাবী অকালে চলে গেলেন।

বাঞ্ছারামপুর এস এম পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, মেধাবী ছাত্রের পাশাপাশি ইমরান নম্র, ভদ্র ও সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ ছিলেন।

এদিকে ইমরানকে হারিয়ে মা–বাবার বিলাপ থামছে না। বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘ইমরানের স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ছেলে আমার চিরদিনের জন্য চলে গেছে।’