বেগম রোকেয়ার বিয়ে নিয়ে সেই সময়ের পুঁথি

আজ থেকে ১২৭ বছর আগের ঘটনা। সেই সময় গ্রামীণ রীতিতে ধুমধামে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেই আয়োজনে ছিল হাতি, ঘোড়া। ছিল গ্রামীণ নানা বাদ্যযন্ত্র। আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। পায়রাবন্দজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। গ্রামবাসীর নিমন্ত্রণ ছিল এই বিয়েতে।

বেগম রোকেয়ার বিয়ের আয়োজন নিয়ে প্রকাশিত পুঁথিতে এসব তথ্য আছে। পুঁথির এই তথ্য পাওয়া গেছে বেগম রোকেয়ার সৎভাই মছিহুজ্জামান সাবের চৌধুরীর অপ্রকাশিত এক পাণ্ডুলিপিতে।

পুঁথিতে বলা হয়েছে, ‘জমিদারের মেয়ের বিয়ের শোর পড়ে গেল। হাতিঘোড়া সাজল কত, দারুণ হট্টগোল। সাজাবাজা বাদ্যযন্ত্র নানা কররোল। বিয়ের সাজে হাতিঘোড়া, রাতে জ্বলে বাতি। গ্যাসবাতির আলো সব দিনের মতো বাতি। আনন্দে মশগুল সবে, যেন দিশেহারা। টাকাপয়সার হিসাব নাই, দিচ্ছে খাজাঞ্চিরা।’ আরও বলা আছে, ‘সাজাবাজা বর বসে, অতি চমৎকার, কোরমা পোলাও পাক হলো বহুত খাবার। দিনে রাতে তিন দিন খাওয়াদাওয়া হয়। সাজাবাজা যত কিছু তিন দিনেই রয়, খুকি এখন বেগম হলো, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের।’

ভারতের বিহার রাজ্যের ভাগলপুরের বাসিন্দা সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে ১৮৯৬ সালে রোকেয়ার বিয়ে হয়। ওই বছরই তিনি স্বামীর সঙ্গে সেখানে চলে যান। এই বিয়ের ঘটক রোকেয়ার দুই ভাই খলিলুর সাবের চৌধুরী ও ইব্রাহিম সাবের চৌধুরীর বন্ধু কৃষ্ণ ধন ঘোষ। কৃষ্ণ ধন ব্রিটিশ আমলে রংপুরের সিভিল সার্জন ছিলেন। তিনি তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। বন্ধুদের সুবাদে পায়রাবন্দে রোকেয়ার বাড়িতে যাওয়া-আসা ছিল তাঁর। পরে তিনি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে রোকেয়ার বিয়ের ঘটকালি করেন।

আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবস। সরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে রোকেয়া দিবস। এ উপলক্ষে সামনে এসেছে বেগম রোকেয়াকে ঘিরে নানা স্মৃতিকথা।

বেগম রোকেয়াদের বসতভিটার একটি অংশ ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানে ইট-সুরকির বিধ্বস্ত দেয়াল অবশিষ্ট আছে। নারীদের গোসলের জন্য সেই সময়ে করা পুকুরটি সেভাবেই আছে। আশপাশে গড়ে উঠেছে পায়রাবন্দ সরকারি বেগম রোকেয়া স্মৃতি মহাবিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র, বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ১০ শয্যাবিশিষ্ট বেগম রোকেয়া হাসপাতাল, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বেগম রোকেয়া স্মৃতি পাঠাগার।

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে সোয়া তিন একর জায়গার ওপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রফিকুল ইসলাম নামের একজন ১৯৮৫ সালে পায়রাবন্দে গড়ে তুলেছেন বেগম রোকেয়া স্মৃতি পাঠাগার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশ-বিদেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ ও বিশিষ্টজনেরা পাঠাগার পরিদর্শন করেছেন। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৯৯ সালের ২৩ মার্চ স্মারক বইতে লিখেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, একবিংশ শতাব্দী হবে নারীদের শতাব্দী। বাংলাদেশে পায়রাবন্দ হোক নেতৃত্বের কেন্দ্রভূমি।’