স্বজনদের সামনে ইজিবাইকচালককে পিটিয়ে আহত, হাসপাতালে মৃত্যু

খুনের ঘটনার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার সকালে মাগুরা সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ইজিবাইকচালকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে হামলার এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনার জেরে রাতেই কাঞ্চনপুর গ্রামে অন্তত পাঁচটি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম জুনাব আলী বিশ্বাস (৪৫)। তিনি সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাকা গ্রামের বাসিন্দা।

জুনাবের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাকা ও কাঞ্চনপুর একই মৌজার পাশাপাশি দুটি গ্রাম। গতকাল বিকেল চারটার দিকে সদর উপজেলার ইছাখাদা বাজার থেকে ইজিবাইকে আরোহী হিসেবে চারজন আত্মীয় নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন জুনাব আলী। পথে কাঞ্চনপুর মসজিদের কাছে পৌঁছালে প্রতিপক্ষের লোকজন পথ রোধ করে নামিয়ে জুনাব আলীকে লাঠি ও রড দিয়ে পেটাতে থাকেন। গুরুতর আহত জুনাবকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জুনাব আলীর ভাতিজার স্ত্রী রাশিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইজিবাইকে ইছাখাদা বাজার থেকে বাড়িতে আসছিলাম। পথে আমার চাচাশ্বশুরকে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে লোহার রড ও কাঠের লাঠি দিয়ে বেদম মারতে থাকেন কাঞ্চনপুর গ্রামের জুনাব ফকির, মিজানুর ফকির ও তাঁদের লোকজন। আমরা এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

বিবদমান দুটি পক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৯ ডিসেম্বর রাতে পাকা গ্রামের জুনাব আলী বিশ্বাস ও কাঞ্চনপুর গ্রামের মিজানুর ফকিরের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। ওই রাতে মিজানুরকে জুনাবের বাড়িতে সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করতে দেখা যায়। এ নিয়ে মিজানুরকে মারধর করেন জুনাব। পরে বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন দুই পক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংসা করে দেন।

ইজিবাইকচালক নিহত হওয়ার পরদিন আজ সকালে আতঙ্কে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন প্রতিপক্ষের বাড়ির শিশু ও নারীরা। সকালে মাগুরা সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ওই সালিসে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন পাকা কাঞ্চনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রজব আলী ও ইছাখাদা বাজারের ব্যবসায়ী কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংসা করে দেন। কিন্তু একটি পক্ষ সেই সালিস না মেনে গতকাল হামলা চালিয়েছে। ওই ঘটনার জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

আজ রোববার সকালে কাঞ্চনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু বাড়ি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন নারীরা। স্থানীয় কয়েকজন নারী ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রাতে জুনাব ফকির, মনিরুল ফকির, নয়ন ফকিরসহ অন্তত পাঁচটি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন।

মিজানুর ফকিরের মা সকিনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে সবকিছু জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে। গরু, বাছুর, টাকা—যা ছিল সব লুটে নিয়ে গেছে। খেলার (বিশ্বকাপ ফুটবল) সময় আমার ছেলেরে ওরা দাবড়ায় ধরে মারিছিল, তাই নিয়েই গ্যাঞ্জাম।’

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ কামরুল হাসান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে রড দিয়ে পিটিয়ে জুনাব আলীকে আহত করা হয়। হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর ময়নাতদন্তের কাজ চলছে। নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা মামলা করলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।