নাব্যতা–সংকট, ভোগান্তি

প্রতিদিন রৌমারী-রাজিবপুর নৌঘাট দিয়ে হাজারো যাত্রী জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন।

নাব্যতা-সংকটে কম যাত্রী নিয়ে চলতে হচ্ছে নৌকার মাঝিদের। এতে তাঁদের আয়ও কমে যাচ্ছে। গত শুক্রবার কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ফকিরেরহাট ঘাটেছবি: প্রথম আলো

ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা–সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের নৌপথের যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার লোকজনের ভোগান্তি বেশি।

জেলা শহরের সঙ্গে ওই দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। প্রতিদিন রৌমারী-রাজিবপুর নৌঘাট দিয়ে হাজারো যাত্রী জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন না করায় এবং ব্রহ্মপুত্র নদের দুই তীর ভাঙনের ফলে নদের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদের বুকে জেগে উঠেছে ছোট ছোট ডুবোচর। এতে নৌ চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদরের মোঘলবাসা নৌঘাট থেকে রৌমারী নৌঘাটের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। ফকিরেরহাট ঘাট থেকে বলদমারা ঘাটের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার এবং রাজিবপুর উপজেলা থেকে চিলমারী উপজেলার দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। বর্ষা মৌসুমে মোঘলবাসা ঘাট থেকে রৌমারী নৌঘাটে যেতে আড়াই ঘণ্টা লাগে। তবে বর্তমানে সময় লাগছে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা। ফকিরেরহাট ঘাট থেকে রৌমারী উপজেলার বলদমারা ঘাটে যেতে বর্ষা মৌসুমে ১ ঘণ্টা সময় লাগলেও বর্তমানে লাগছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। অন্যদিকে আগে রাজিবপুর উপজেলা থেকে চিলমারী নদীবন্দর ঘাটে যেতে আড়াই ঘণ্টা লাগে। বর্তমানে সময় লাগছে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা।

নৌকার মাঝিরা জানান, নদের নাব্যতা–সংকট ও ডুবোচরে নৌকা লেগে যাওয়ায় বাড়তি সময় লাগছে। এতে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় দেড় মাস এই অবস্থায় চলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি।

গত শুক্রবার চিলমারী উপজেলার ফকিরেরহাট ঘাটে গিয়ে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদে ছোট ছোট ডুবোচর জেগে উঠেছে। দেড় মাস ধরে ফকিরেরহাট নৌঘাট থেকে রৌমারী উপজেলার ফলুয়ারচর নৌঘাটে নৌকা যেতে পারছে না। ঘাট থেকে দূরত্বে নৌকা রেখে যাত্রীদের বালুচর হেঁটে ঘাটে যেতে হচ্ছে। নদের পানি কমে যাওয়ায় মালামাল বোঝাই নৌকা ও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকা ঘাটে ভিড়ছে না। ডুবোচরে নৌকা আটকে অতিরিক্ত সময় লাগছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে।

ফকিরেরহাট নৌঘাটের নৌকাচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, নদীতে এখন পানি পানি নেই। আগের মতো নৌকা চালায় আর শান্তি পাই না। নাব্যতা না থাকায় যাত্রী বেশি নেওয়া যায় না, মালামাল পারাপারে অসুবিধা বেশি হয়। হঠাৎ হঠাৎ মাঝ নদে ডুবোচরে নৌকা আটকে যায়। হঠাৎ করে নৌকা আটকে গেলে যাত্রীদের নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। যেকোনো সময় নৌকা স্রোতে উল্টে যেতে পারে। কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে আয়ও কমে গেছে।

রৌমারীর ব্যবসায়ী মোনায়েম হক বলেন, বর্তমান বোরো ধান রোপণের মৌসুম। জেলা শহর থেকে তেল ও সার কিনে ব্যবসায়ীরা নদীপথে রৌমারী-রাজিবপুর আনেন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা–সংকটের কারণে চিলমারীর ফকিরেরহাট ঘাট ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোঘলবাসা ঘাট থেকে আর পণ্যবাহী নৌকা রৌমারীর বলদমারা ঘাটে বড় নৌকা ভেড়ানো যাচ্ছে না। মালবাহী নৌকা দূরে নোঙর করে ছোট নৌকায় করে মালামাল ঘাটে আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ছোট ছোট চর জেগে উঠায় পানি

প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে নদে নাব্যতা–সংকট দেখা দিয়েছে। নদ খননের বিষয়ে তিনি বলেন, নদ-নদী খননের দায়িত্ব তাঁদের নয়। বিআইডব্লিউটিএ ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী রমনা ঘাট এলাকায় খনন শুরু করেছে।