দুই আসনে অর্ধেকেরই মনোনয়নপত্র বাতিল, সদরে ‘নির্ভার’ আ.লীগ

যাচাই–বাছাইয়ে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে পাঁচজন এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনে ছয়জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রোববার জেলা প্রশাসক মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া মোট ২২ প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকেরই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে পাঁচজন এবং বগুড়া-৬ আসনে ছয়জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।

আজ রোববার যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন

এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ ও বিএনপির সাবেক নেতা সরকার বাদলের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী রাগেবুল আহসান ‘চাপমুক্ত’ বলে জানিয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। রাগেবুল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল মান্নান আকন্দ ও সরকার বাদলের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠে নেই। এখন নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।

আরও পড়ুন

বগুড়া-৬ আসনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া ছয়জন হলেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মনসুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ, আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম, বিএনপির সাবেক নেতা সরকার বাদল, বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ ও রাকিব হাসান। এ আসনের বৈধ প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান, জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর, জাসদের ইমদাদুল হক, গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. ফয়সাল বিন শফিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি মাছুদার রহমান হেলাল।

অন্যদিকে, বগুড়া-৪ আসনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন আশরাফুল ইসলাম ওরফে হিরো আলম, বিএনপির সাবেক নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী, গোলাম মোস্তফা, ইলিয়াস আলী ও আবদুর রশিদ। এ আসনের বৈধ প্রার্থীরা হলেন জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল, জাকের পার্টির আবদুর রশিদ সরদার ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের তাজ উদ্দীন মণ্ডল।

আ.লীগ কর্মীর সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর হট্টগোল

আজ দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দের মনোনয়নপত্র যাচাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসহ সমর্থনসূচক যে তালিকা দিয়েছেন, সেখানে দুজন ভোটার এলাকায় উপস্থিত নেই এবং তাঁদের স্বাক্ষর যাচাই করা সম্ভব হয়নি। স্বাক্ষর দিয়েছেন বলে প্রতীয়মানও হয়নি। এ কারণে নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলো। আপিল করতে চাইলে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।’

এ সময় মান্নান বলেন, ‘গাইবান্ধায় যে নারী ভোটার আছেন, তিনি যাচাইকারী কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে ভিডিও কলে কথা বলে স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিদেশে থাকা ভোটারের মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে এসেছেন। এরপরও মনোনয়ন বাতিল করা হলে জনগণের সঙ্গে অন্যায় করা হবে।’

আরও পড়ুন

এরপর মান্নান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নালিশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল থেকে মাছের খামারের জন্য ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি সেই ঋণখেলাপি। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকা দরকার ছিল।’ তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘ঋণখেলাপির তালিকা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।  ব্যাংক থেকে পাঠানো খেলাপির তালিকায় রাগেবুল আহসানের নাম নেই। এ জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কিছুই করার নেই। আইনের বাইরে আমরা যেতে পারি না। চাইলে তিনি ইসিতে অভিযোগ করতে পারেন।’

এ সময় রাগেবুলের সঙ্গে আসা একজন কর্মী মান্নানের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। তখন মান্নান বলেন, ‘প্রার্থী, সমর্থক ও প্রস্তাবক ছাড়া এখানে অন্য কারও থাকার কথা নয়। তাহলে উনি (কর্মী) কে?।’ পরে ওই কর্মীর সঙ্গে আরেক দফা বাগ্‌বিতণ্ডা ও হট্টগোল বাঁধে মান্নানের। তখন ওই কর্মীর উদ্দেশে মান্নান বলেন, ‘এই তুই হামার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলু ক্যা? তুই এ কথা বলার কে?’ তখন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করে।

আরও পড়ুন
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুই আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসছেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

আবদুল মান্নান আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যায় ও ষড়যন্ত্র করে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আমি ইসিতে আপিল করব। শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

অন্যদিকে এই আসনে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদলের মনোনয়নও বাতিল করা হয়েছে। ন্যূনতম ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসহ সমর্থনসূচক তালিকায় গরমিল থাকায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়। সরকার বাদল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় বিএনপি করতাম। এখন বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই। এলাকার সাধারণ ভোটারের আমার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে ভীত হয়ে ষড়যন্ত্র করে মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে আপিল করব।’

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২০২১ সালের বগুড়া পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কার হয়েছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। ওই নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ভোট, পেয়ে আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোট পাওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী চ্যালেঞ্জের মুখে ছিলেন। তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় আপাতত ‘নির্ভার’ আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান বলেন, আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাঁকে নিয়ে আওয়ামী লীগ চিন্তিতও নয়। নৌকা শেখ হাসিনার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। বিভেদ ভুলে এক জোট হয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। উপনির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।