সংস্থার কার্যালয় পরিত্যক্ত, ঝোপঝাড়ে ঘেরা টিনশেডে ভিমরুলের চাক

মনিরামপুর উপজেলার দিঘীরপাড় বাজারের শুরুতে রাজগঞ্জ-ঝিকরগাছা সড়কের পাশে পরিত্যক্ত ঘরটি সিডের কার্যালয়। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

বেসরকারি সংস্থাটির (এনজিও) নাম সার্ভিসেস ফর ইকুইটি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (সিড)। ঠিকানা—দিঘীরপাড় বাজার, মনিরামপুর, যশোর। নির্বাচন কমিশন যে ৭৩টি সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে, সেই তালিকায় ২৫ নম্বরে আছে এই সিডের নাম।

গত রোববার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মনিরামপুর উপজেলার দিঘীরপাড় বাজারের শুরুতে রাজগঞ্জ-ঝিকরগাছা সড়কের পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘর। ঘরটির চারপাশ ঝোপঝাড়ে ঘেরা। দুই কক্ষের পাকা ঘর, টিনের ছাউনি। ঘরের এক পাশ ভেঙে পড়েছে। টিনের চালের কিছু অংশ ভেঙে ঝুলছে। একটি কক্ষে ভাঙাচোরা দরজা, তার ওপরে লেখা—‘ম্যানেজার কক্ষ’। ভেতরে ধুলো জমা দুটি ভাঙা আসবাবপত্র। অপর কক্ষে দরজা নেই। কক্ষের সামনে ভিমরুলের বড় চাক। জানালাগুলো খোলা, গ্রিল মরিচায় ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ছে। জরাজীর্ণ ঘরে কোনো কার্যক্রম চালানোর মতো পরিবেশ নেই। ঘরের সামনে নেই কোনো সাইনবোর্ডও।

নির্বাচন কমিশনের তালিকায় সিডের প্রধান নির্বাহী হিসেবে জন এস বিশ্বাসের নাম থাকলেও স্থানীয় লোকজন তাঁকে চেনেন না। এলাকায় তাঁকে কখনো দেখেননি।

স্থানীয় লোকজন জানান, দিঘীরপাড় বাজারের পূর্ব পাশে ১৯৯০ সালে আকবর হোসেন নামের এক ব্যক্তি এনজিও সিড প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে বেশ জমজমাট ছিল। তবে ২০০৭ সালে আকবর হোসেন মারা গেলে তাঁর স্ত্রী রেবেকা সুলতানা দায়িত্ব নেন। এরপরই লোকজন অফিস ছেড়ে যেতে শুরু করে, কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। রেবেকা সুলতানা ও তাঁর ছেলে ঢাকায় চলে যান। ১০–১২ বছর ধরে সিডের এই অফিস পরিত্যক্ত। এক সময় জমি দখলে রাখার জন্য একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হলেও এখন সেটিও নেই।

ঘরের এক পাশ ভেঙে পড়েছে। টিনের চালের কিছু অংশ ভেঙে ঝুলছে। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় লোকজন ভাষ্য, কাগজে-কলমে একটি কমিটি থাকলেও সেটিতে আছেন মূলত রেবেকা সুলতানা, তাঁর ছেলে এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন।

কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এর আগের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিড পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছিল। তখন জরাজীর্ণ ভবনের পাশে একটি সাইনবোর্ডও ছিল। বর্তমানে নেই। সিডের সাধারণ সম্পাদক রেবেকা সুলতানার বাবার বাড়ি দিঘীরপাড়ের পাশের জোকা গ্রামে। তাঁর বাবা শহর আলী মোল্লা বলেন, ‘জামাই আকবর হোসেন দিঘীরপাড় বাজারে জমি কিনে এনজিও খুলে ঋণ দিতেন। প্রথম দিকে ১৫-১৬ জন কর্মচারী ছিল। বিদেশ থেকেও টাকা আসত। ২০০০ সালের দিকে জামাই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়লে সবাই অফিস ছেড়ে যায়। ২০০৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে মেয়ে দায়িত্ব নিলেও জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে নতুন ভবন করা হয়নি। এরপর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আমার মেয়ে এখন ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় থেকে অফিস চালাচ্ছে।’

আরও পড়ুন

মুঠোফোনে কথা হয় সিডের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সংস্থার সভাপতি জন এস বিশ্বাস। আমি সাধারণ সম্পাদক। আমার ছেলে সহসভাপতি। সংস্থাটি ছিল আমার স্বামীর। তাঁর মৃত্যুর পর আমি দায়িত্ব নিই। ১৯৯০ সালে মনিরামপুরে পাঁচ শতক জমি কেনা হয়েছিল, তা নিয়ে মামলা চলছে। এ কারণে সেখানে ভবন করা যায়নি। অফিস ঢাকায় সরিয়ে আনা হয়েছে। কোনো রকমে কার্যক্রম চলছে।’ তিনি আরও বলেন, আগে মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণের কাজ ছিল। সর্বশেষ ঝিনাইদহের দুটি উপজেলায় সরকারের পাশাপাশি ভিজিডির কাজ করেছিলাম। মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন কোনো কার্যক্রম নেই।

সিডের সভাপতি জন এস বিশ্বাস বলেন, দিঘীরপাড়ে কার্যক্রম অনেক আগেই বন্ধ হয়েছে। এখন ঢাকায় কার্যক্রম চলছে।

আরও পড়ুন