রেলমন্ত্রীর ঘোষণায়ও ফরিদপুরে না থামায় চন্দনা ট্রেনের গতি রোধ করল জনতা

চন্দনা ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে ট্রেনটির গতিরোধ করে স্থানীয় জনতা। পরে তাদের সরিয়ে নেয় পুলিশ। বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে তোলা ছবিপ্রথম আলো

ফরিদপুরে এবার ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে ফেরার পথে চন্দনা কমিউটার ট্রেনের গতি রোধ করল বিক্ষুব্ধ জনতা। আজ বুধবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ফরিদপুর স্টেশন পাড় হওয়ার আগেই রেলপথে দাঁড়িয়ে গিয়ে ট্রেনটির গতি রোধ করা হয়। পরে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে রেললাইন থেকে সরিয়ে নিলে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি রাজবাড়ীর উদ্দেশে রওনা দেয়।

রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পথে চলাচলকারী চন্দনা কমিউটার ট্রেনটির আজ এক মাস পূর্ণ হলো। ট্রেনটি যাতে ফরিদপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়, এ দাবিতে চালুর দিন গত ৫ মে এবং এক সপ্তাহ পর ১১ মে ভোরে ফরিদপুর রেলস্টেশনের সামনে ট্রেনের গতি রোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফরিদপুরবাসীর দাবির মুখে ১৮ মে ভাঙ্গায় রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ফরিদপুর স্টেশনে থামবে চন্দনা কমিউটার ট্রেন। এ ট্রেন থামানোর জন্য তাঁদের আর আন্দোলন করতে হবে না। রেলমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর ১৮ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও ট্রেন থামার ঘোষণা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজ আবার ট্রেনটির গতি রোধ করেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা।

চন্দনা কমিউটার ট্রেন প্রতিদিন সকাল পাঁচটায় রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এটি ফরিদপুরে কোনো যাত্রাবিরতি না দিয়ে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ভাঙ্গায় পৌঁছায়। ট্রেনটি সেখানে এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতি দিয়ে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। ভাঙ্গা থেকে ঢাকার পথে ওই ট্রেনের নামকরণ হয় ভাঙ্গা কমিউটার ট্রেন হিসেবে। এটি ঢাকায় পৌঁছায় সকাল ৯টায়। একই ট্রেন সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রওনা হয়ে ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছায় রাত ৮টায়। ভাঙ্গায় ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে ৮টা ১০–এ চন্দনা কমিউটার নামে রাজবাড়ীর উদ্দেশে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় রাজবাড়ী রেলস্টেশনে পৌঁছায়।

ট্রেন আটকানোর পর স্থানীয় লোকজন ফরিদপুরে যাত্রাবিরতির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের কয়েকজন জানান, ওসি ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলনকারীদের অনুরোধ করলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ওসির বাদানুবাদ হয়।

আন্দোলনকারীদের ওসি মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ট্রেন থামা না–থামার বিষয়টি আমার বিচার্য বিষয় নয়। তবে মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা আমি পত্রিকায় পড়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমি এখানে এসেছি। তবে আমি চাই, ট্রেনটি যাত্রাবিরতি দিক ফরিদপুরে।’

আন্দোলনকারীদের পক্ষে মহুয়া ইসলাম বলেন, রেলমন্ত্রী বলেছেন, ট্রেন থামবে। তারপর ১৮ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তিনি (মন্ত্রী) এ দপ্তরের প্রধান। তারপরও ট্রেন ফরিদপুরে থামছে না কার ইশারায়। আরেক আন্দোলনকারী আবরাব নাদিম বলেন, ‘ট্রেন ফরিদপুরে থামতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, মেইলও করেছি। তারপরও কেন ট্রেন থামছে না। ট্রেন না থামা পর্যন্ত প্রয়োজন হলে প্রতিদিন রাতে আমরা আন্দোলন করে ট্রেন থামাব।’

এর আগে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ ট্রেন থামানোর অনুরোধ জানিয়ে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে চিঠি দেন। ফরিদপুরের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ঝর্না হাসানও রেলমন্ত্রীকে ফোন করে ফরিদপুরে ট্রেনটির যাত্রাবিরতি দেওয়ার জন্য দাবি জানান।

ফরিদপুর রেলস্টেশনের মাস্টার তাকদির হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনের এ যন্ত্রণা থেকে আমি মুক্তি চাই। আমি চাই, ট্রেন থামুক। কিন্তু আমি ইচ্ছা করলেই তো ট্রেন থামাতে পারি না। এ–সংক্রান্ত একটি নির্দেশনার আপেক্ষায় আছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে।’