প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীকে সরে দাঁড়াতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নেতৃত্বে অস্ত্রের মহড়া

সিলেটের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহর বাসার সামনে অস্ত্রসহ মহড়া দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খাঁন ও তাঁর অনুসারীরা ওই মহড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের বিরুদ্ধে  প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ নামের ওই প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্রসহ মহড়া দেওয়ার দৃশ্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আফতাব হোসেন খান ওই প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ লিখিত অভিযোগে বলেন, গত মঙ্গলবার আনুমানিক সকাল ছয়টার দিকে বর্তমান কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আফতাব হোসেন খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাঁর বাসার ফটকের সামনে আসে। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক তাক করে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়। পাশাপাশি ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রাখার জন্য সায়ীদ মো. আবদুল্লাহকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও লিখিত অভিযোগে বলা হয়। ওই লিখিত অভিযোগে সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ আরও জানিয়েছেন, আফতাব ও তাঁর অনুসারীরা ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় বলে বেড়াচ্ছেন, নির্বাচনের দিন তাঁরা সব কেন্দ্র দখল করে রাখবেন এবং কাউকে ভোট দিতে দেবেন না। কেউ যদি ভোট দিতে যান, তাহলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।

সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আরও অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডের প্রতিটি অলিগলিতে বন্দুক বের করে মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়া তাঁর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং মাইকিংয়ে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি তাঁর বিভিন্ন কর্মীদের বাসাবাড়িতে সশস্ত্র অবস্থায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।

এদিকে আফতাব হোসেন খান ও তাঁর অনুসারীদের মোটরসাইকেল নিয়ে সায়ীদ মো. আবদুল্লাহর বাসার সামনে অস্ত্রসহ একটি মহড়ার দৃশ্যের একটি ভিডিও গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে মোটরসাইকেলে বসা এক যুবকের হাতে বন্দুক দেখা গেছে।

কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, বন্দুকধারী ওই যুবক হচ্ছেন মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিন। তিনি আফতাবের অনুসারী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। এর আগে ২০২১ সালের ১২ মার্চ ওই যুবক র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯) সদস্যদের হাতে পিস্তল-গুলিসহ গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে সম্প্রতি ওই যুবক জামিনে বের হয়েছেন।

কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহের বাড়ির সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব সাজানো। লন্ডন থাকি এডিটের মাধ্যমে ভিডিও ছাইড়া দিছে।’ এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর কোনো অভিযোগ সত্য নয় বলেও তিনি দাবি করেন।

বন্দুক নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিনের দুটি মুঠোফোন নম্বরে কল করলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে সিলেট সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, সিলেট সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আফতাব (ঘুড়ি), সায়ীদ (লাটিম) ও মো. জাহিদ খান সায়েক (ঠেলাগাড়ি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২১ জুন এখানে ভোট হবে।