কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা–কর্মীদের নিয়ে দপ্তরে প্রবেশের সময় শিক্ষক সমিতির নেতারা বাধা দেন। এ সময় উপাচার্য ও নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সমিতির নেতাদের ধস্তাধস্তি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। রোববার দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনেছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও ছাত্রলীগের সাবেক ১৭ জন নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গতকাল রোববার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু তাহের বাদী হয়ে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এতে বিবাদী হিসেবে রয়েছেন উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন, কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান ও প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আমিনুর রহমান বিশ্বাস, রেজা-ই-এলাহী, মাসুদ আলম, ইকবাল হোসাইন খান, পার্থ সরকার, বিপ্লব চন্দ্র দাস, ইমরান হোসাইন, মুশফিকুর রহমান খান তানিম, রকিবুল হাসান রকি, মেহেদী হৃদয়, ফয়সাল হাসান, এম নুর উদ্দিন হোসাইন, অনুপম দাস বাঁধন, আরিফুল হাসান খান বাপ্পী, ইমাম হোসাইন মাসুম, রাকিব ও দ্বীপ চৌধুরী।

আরও পড়ুন

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮ এপ্রিল (গতকাল রোববার) বেলা একটায় প্রশাসনিক ভবনের ফটকের সামনে শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচি চলছিল। এ সময় উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হানের পেটে ঘুষি মারেন এবং পেছন দিক থেকে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। এরপর তাঁর (উপাচার্যের) সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি মুর্শেদ রায়হানের পেটে ঘুষি মেরে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। একই সময়ে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকাদ্দেস উল ইসলামের মুখে সজোরে ঘুষি মারেন। এরপর মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে শারীরিক আঘাত করেন। এ সময় অন্তত ২০ জন শিক্ষক হামলার শিকার হন। উপাচার্যের কার্যালয়ে বসে কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান বহিরাগতদের (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে হামলা ও তালা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, ‘১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের ওপর উপাচার্যের দপ্তরে হামলা হয়। আমরা থানায় জিডি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দুই মাস পর জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে তদন্ত কমিটি করে। সেটির কোনো কার্যকারিতা নেই। রোববার আবার বহিরাগত এনে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা হয়। উপাচার্য নিজে হামলায় অংশ নেন, ফুটেজ আছে। প্রক্টর এক শিক্ষককে ঘুষি মারেন। কোষাধ্যক্ষ শিক্ষক সমিতির কার্যালয় ভাঙতে বহিরাগতদের পাঠান। ২০ জন শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা হয়। তাই আমরা মামলা করেছি।’

ওই ঘটনার পর গতকাল বিকেল পাঁচটায় প্রশাসনিক ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হানসহ শিক্ষক সমিতির ৮-১০ জন তিনিসহ অন্য সাধারণ শিক্ষকদের ওপর হামলা করেন। এ সময় সেখানে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী আহত হন। সংবাদ সম্মেলনে আহত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে উপাচার্য কারও নাম বলতে পারেননি।

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রোববার মধ্যরাতে থানায় অভিযোগ করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের। এতে ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরসহ ২০ জনের নাম অভিযোগে আছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।