অটোরিকশায় অনিরাপদ সড়ক

কোনো নিয়মনীতি না থাকায় কেউ চাইলেই রাস্তায় নামাতে পারছেন ব্যাটারিচালিত নতুন অটোরিকশা।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলে সড়ক। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জের কদমতলী জিনজিরা সড়কের লায়ন শপার্স বিপণিবিতানের সামনেছবি: প্রথম আলো

ঢাকার কেরানীগঞ্জের সড়কগুলোতে দিন দিন বেড়ে চলেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা। তিন চাকার এসব যানবাহনের কারণে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে সড়ক। দুর্ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে পথচারীদের। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সড়কে অটোরিকশার দাপট নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন সড়কে প্রায় তিন হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এসব যানবাহনের কোনো নিবন্ধন নেই। চালকদেরও প্রশিক্ষণ নেই। কোনো রকম নিয়মনীতি না থাকায় কেউ চাইলেই রাস্তায় নামাতে পারছেন নতুন নতুন অটোরিকশা।

উপজেলার শুভাঢ্যা, কদমতলী, জিনজিরা, রামেরকান্দা, কোণাখোলা, আটিবাজার, রোহিতপুর, কলাতিয়া, রাজেন্দ্রপুর, হাসনাবাদ, রাজেন্দ্রপুর ও কালিগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা যায় মোড়ে মোড়ে, অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে। চলাচলের সময় বাজানো হচ্ছে উচ্চ শব্দের হর্ন। বেশির ভাগ অটোরিকশায় নেই আধুনিক ব্রেকের ব্যবস্থা, সাইড মিরর। চালকদের বেশির ভাগই অপরিণত বয়সের। যত্রতত্র অটোরিকশা রাখায় এবং গাড়ি ঘুরানোয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

কথা হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক রাকিব হোসেনের (২০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে সপ্তাহখানেক প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাইভিং শিখেছি। খোলামাঠে ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নিতাম। কয়েক দিন পর সড়কে অটোরিকশা চালিয়ে অনুশীলন করেছি। প্রথম দিকে সমস্যা হলেও এখন ভালোভাবে চালাতে পারি।’

এসব অটোরিকশা নিবন্ধন করা এবং চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। এসব থাকলে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরত।
জাকির হোসেন, আহ্বায়ক, কেরানীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালক সমিতি

কেরানীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালক সমিতির আহ্বায়ক জাকির হোসেন জানান, এসব অটোরিকশা নিবন্ধন করা এবং চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। এসব থাকলে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরত। এ বিষয়ে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। জুলাই মাসে অটোরিকশার ধাক্কায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে শুভাঢ্যা পূর্বপাড়া হিজলতলা বাজার এলাকায় ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশায় বালুবোঝাই একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে সুমন হোসেন নামে অটোরিকশার একজন যাত্রী গুরুতর আহত হন।

ইকুরিয়া হাসনাবাদ এলাকায় ৫ জুলাই সড়ক পারাপারের সময় অটোরিকশার ধাক্কায় মো. মহসিন নামের এক যুবকের হাঁটু ও বাঁ হাত জখম হয়। ১০ জুলাই জিনজিরা সড়ক এলাকায় দুটি ব্যাটারিচালিত অটেরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হন শরীফ হোসেন, তাঁর স্ত্রী হালিমা বেগম ও তাঁদের ছেলে ইমতিয়াজ। ১৭ জুলাই কোণাখোলা সড়কে অটোরিকশা উল্টে আহত হন সোহেল রানা ও সালাম মিয়া নামে দুই যাত্রী। ২৩ জুলাই চুনকুটিয়া চৌরাস্তা এলাকায় অটোরিকশার ধাক্কায় কোমর ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন এক পথচারী।

কদমতলী এলাকার বাসিন্দা রোকন হোসেন বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বেশির ভাগ চালক অদক্ষ ও অপরিণত বয়সের। বেপরোয়া গতিতে অটোরিকশা চলাচলের কারণে ভয়ে ভয়ে সড়ক পারাপার হতে হয়। পথচারীরা যখন সড়ক পার হয়, তখন হাত দিয়ে সংকেত দিলেও অটোরিকশার চালকেরা গতিরোধ করে না। এতে প্রতিদিন অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। যেভাবে অটোরিকশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দীন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধিত না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া এসব যানের চালকদের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। তবে কোন রুটে অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে, সেটি প্রশাসন নির্ধারণ করে দেয়। তাদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।