মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন দিয়ে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না: আলতাফ চৌধুরী

বরিশালে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু ও মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন দিয়ে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল।  বিএনপি নির্বাচন করবে দেশ ও জনগণের মুক্তির জন্য। ভোট জালিয়াতির যন্ত্র ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করে একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচন করবে না। আর এবার কাউকে নির্বাচন করতেও দেওয়া হবে না।

খালেদা জিয়াসহ সব কারাবন্দী নেতার মুক্তি, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বরিশালে আজ শনিবার আয়োজিত এক সমাবেশে আলতাফ হোসেন চৌধুরী এসব কথা বলেন।

আজ দুপুরে মহানগর বিএনপির আয়োজনে নগরের সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের মো. রহমতউল্লাহ, হাসান মামুন ও এবায়দুল। এটি সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির।

সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত, স্বাধীনতার মাসে এখানেও ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে মার্চ মাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে আওয়ামী লীগ -এমন অভিযাগ তুলে সমাবেশে আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না এ ঘটনাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নিজেদের ভরাডুবি আঁচ করতে পেরে বিএনপির প্রার্থীদের ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সমাবেশে আলতাফ হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। আমরা লড়াই শুরু করেছি মানুষ যাতে তার অধিকার পায়, ন্যায়বিচার পায় এবং সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারের বিরুদ্ধে বর্তমানে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আন্দোলন নয়, এটা এ দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলন। দেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন সফল হবেই। সফল না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির একজন কর্মীও ঘরে ফিরে যাবে না।’

পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে টাকা নেই। এই লুটপাটকারী ও টাকা পাচারকারীদের বিচার এ দেশের মাটিতে জনগণ ভোটের মাধ্যমে করবে।
আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান

দেশ এখন দুর্নীতির সূতিকাগারে পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে টাকা নেই। এই লুটপাটকারী ও টাকা পাচারকারীদের বিচার এ দেশের মাটিতে জনগণ ভোটের মাধ্যমে করবে।

বিএনপির নেতা আলতাফ হোসেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশে আজ দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি। মানুষ আজ বাজারে গিয়ে অসহায়। অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের কারণে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অথচ সরকার উন্নয়নের নামে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে। জনগণের কষ্ট-দুর্ভোগ নিয়ে তাদের কোনো অনভূতি নেই। তাই এই সরকারকে বিদায় না করা পর্যন্ত দেশের মানুষের কোনো মুক্ত নেই, স্বস্তি আসবে না। এ জন্য আমাদের লক্ষ্য, জনগণের একমাত্র চাওয়া এই সরকারের পদত্যাগ। দমন–পীড়ন চালিয়ে সরকার টিকে থাকতে চাইছে, কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা আর সফল হবে না।’

প্রতিবাদ সমাবেশ উপলক্ষে আজ সকাল থেকে বরিশাল নগরের ৩০টি ওয়ার্ড থেকে নেতা–কর্মীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন বহন করে মিছিল নিয়ে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন। বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে সদর রোড ও আশপাশের এলাকায় বিপুল পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৩ ডিসেম্বর বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট সরকারের পদত্যাগের দাবি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছিল, শনিবারের এই প্রতিবাদ সমাবেশ তারই ধারাবাহিকতায় আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে তিন মাসে দলটি সারা দেশে গণমিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে যুগপৎভাবে। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি দলটি ইউনিয়ন পর্যায় থেকে মহানগর পর্যন্ত কয়েক দফায় পদযাত্রার কর্মসূচিও পালন করে। সর্বশেষ ১১ মার্চ সারা দেশে এক ঘণ্টা মানববন্ধন কর্মসূচি করেছিল। সেই কর্মসূচি থেকে ১৮ মার্চ প্রতিবাদ সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।