শ্রীপুরে নার্স দিয়ে অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে ভাঙচুর
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার একটি হাসপাতালে নার্স দিয়ে অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নারীর স্বজনেরা এ অভিযোগ করেছেন। গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার লাইফ কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে ক্ষুব্ধ স্বজনেরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
মারা যাওয়া প্রসূতির নাম ইয়াসমিন আক্তার। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা গ্রামের মো. আসাদুল্লার স্ত্রী। এই দম্পতির ১০ বছর বয়সী এক মেয়েসন্তান আছে।
ইয়াসমিন আক্তারের মা রাজিয়া আক্তার দাবি করেন, তাঁকে না জানিয়ে তাঁর মেয়েকে হাসপাতালের নার্স দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এতে তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজিয়া আক্তার বলেন, গতকাল দুপুর ১২টায় ইয়াসমিন আক্তারকে চৌরাস্তার লাইফ কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ইফতারের পর অস্ত্রোপচার করা হবে বলে তাঁকে কাউন্টার থেকে জানানো হয়। এ সময় স্বজনেরা সবাই চলে যান। তবে তিনি হাসপাতালের কেবিনের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। হঠাৎ তড়িঘড়ি করে বিকেল ৫টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে না জানিয়ে ইয়াসমিনের অস্ত্রোপচার করেন। এতে ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। পরে তিনি কেবিনের ভেতরে গিয়ে দেখেন, মেয়ের নিথর দেহ বিছানায় পড়ে আছে। শরীর থেকে প্রচুর রক্ত যাচ্ছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে, তারা দ্রুত ইয়াসমিনকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে পালিয়ে যান।
মারা যাওয়া প্রসূতির মামা পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালের সামনে এসে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাঁর ভাগনিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। অ্যাম্বুলেন্সের চালক, হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট কাউকেই তখন তিনি হাসপাতালে পাননি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, চিকিৎসক ছাড়া নার্সের মাধ্যমে তাঁর ভাগনির অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ইয়াসমিন আক্তারের স্বামী মো. আসাদুল্লাহর ভাষ্য, তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে সেখানে চিকিৎসক নেই বলে তাঁদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর আবার বলা হয়, ইফতারের পর অস্ত্রোপচার করা হবে, সব ব্যবস্থা হয়েছে। অথচ ইফতারের আগেই চিকিৎসক না থাকার পরও তাঁরা অস্ত্রোপচার করে ফেলে। ভুল অস্ত্রোপচার করায় রক্তক্ষরণে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
এ বিষয়ে লাইফ কেয়ার হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোষ তো সব মিলিয়েই। একে তো একটা মানুষের হায়াত নাই, আবার সমস্যা না থাকলেও হাসপাতালের সমস্যা। শুনেছি, হাসপাতালের ঊর্ধ্বতনরা রাতেই রোগীর পরিবারের সঙ্গে মিউচুয়াল করেছেন। আমরা হাসপাতালের সব রোগী অন্যত্র রেফার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ সোমবার সকালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে সেখানে চিকিৎসক পাঠিয়েছিলাম, কোনো জটিল রোগী ভর্তি আছে কি না তা দেখার জন্য। এরপর হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেব। এর আগেও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।’
একই হাসপাতালে এ বছরের জানুয়ারি মাসে পারভীন আক্তার (৩৫) নামের এক নারীর শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত প্রবেশ করানোর অভিযোগ উঠেছিল। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর বিভিন্ন অপরাধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন র্যাবের পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই বছরের ১৩ মার্চ এই হাসপাতালে মোছা. শিমু নামের এক প্রসূতির ভুল চিকিৎসা করা হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় কফিল উদ্দিন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি।