পঞ্চম ধাপে শূন্যরেখার আরও ৫৪৩ রোহিঙ্গাকে উখিয়ায় স্থানান্তর

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে অবস্থান নেওয়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের বাসে উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে নেওয়া হচ্ছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত থেকে আজ রোববার পঞ্চম ধাপে শূন্যরেখার আরও ১০১ পরিবারের ৫৪৩ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ট্রানজিট কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিবন্ধনের তথ্য যাচাইয়ের পর রাতেই সব রোহিঙ্গাকে উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এর আগে চার ধাপে তুমব্রু সীমান্ত থেকে ১৯০ পরিবারের ১ হাজার ২১০ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে পাঁচ ধাপে ২৯১ পরিবারের ১ হাজার ৭৫৩ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হলো।

২৯ ও ৩০ জানুয়ারি ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের নেতৃত্বে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেওয়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের গণনা করা হয়। এতে ৫৫৮ পরিবারের ২ হাজার ৯৭০ জন রোহিঙ্গাকে পাওয়া যায়। এর মধ্যে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ৩৭৭ পরিবারের ২ হাজার ৯৮ জন। বাকি ১৭৯ পরিবারের ৮৭২ জন রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত। প্রথম দিকে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কয়েক দফায় একাধিক বাসে তুলে তুমব্রু থেকে ১০১ পরিবারের ৫৪৩ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়ার বালুখালী ট্রানজিট কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ও অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ের পর তাঁদের উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরে স্থানান্তর করা হয়।

তুমব্রু থেকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের ট্রানজিট কেন্দ্রে আনা এবং তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তরের কার্যক্রম যৌথভাবে পরিচালনা করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় ও জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ঘুমধুম ইউপি কার্যালয়ের তথ্যমতে, ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া প্রথম ধাপে তুমব্রু থেকে ৩৬ পরিবারের ১৮৪, ৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ পরিবারের ২৭৩, ৮ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ধাপে ৫১ পরিবারের ২৭২, ৯ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫০ পরিবারের ৪৮১ ও আজ পঞ্চম ধাপে ১০১ পরিবারের ৫৪৩ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে তুমব্রুতে অবস্থান করছেন শূন্যরেখার আরও ২৬৭ পরিবারের ১ হাজার ২১৭ জন রোহিঙ্গা।

আরও পড়ুন

মিয়ানমারের রাখাইনে প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরে থাকবেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ধাপে ধাপে তুমব্রু সীমান্তের সব রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হবে। তুমব্রুতে কোনো রোহিঙ্গাশিবির রাখা হবে না।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ১৮ জানুয়ারি শূন্যরেখার শিবিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মির’ (আরসা) সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের’ (আরএসও) মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় একজন রোহিঙ্গা নিহত ও দুই শিশু আহত হয়। এ ঘটনার পর শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে ৬৩০টির বেশি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে ৪ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নেয়। ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি দুই দিন গণনা করে ২ হাজার ৯৭০ রোহিঙ্গা পাওয়া গেলেও বাকি ১ হাজার ৩৩০ জন রোহিঙ্গার হদিস মিলছে না।

আরও পড়ুন

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, তুমব্রু সীমান্তে অবস্থান নেওয়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের অনেকে হত্যা, মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি। তাঁদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে এসেছে ৮ লাখ। ওই সময় স্থলপথে ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ায় শূন্যরেখায় আশ্রয়শিবির গড়ে তোলে।