বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার পর থমথমে পাটগ্রাম

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল ঘিরে রেখে পুলিশ। সেখানে পড়ে আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলীর ব্যবহৃত চাদর। আজ শনিবার সকালে পাটগ্রামের নিউ পূর্বপাড়ার পোস্ট অফিসপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলীকে (৬৮) হত্যার ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের খবরে এলাকার মানুষজন ভিড় করছেন ঘটনাস্থল নিউ পূর্বপাড়ার পোস্ট অফিসপাড়ার ওয়াজেদ আলীর বাসার ফটকের সামনে। তথ্য সংগ্রহ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে কারা, কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা কেউ বলতে পারছেন না।

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাটগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ পূর্বপাড়ার পোস্ট অফিসপাড়া বাসার ফটকের সামনে এম ওয়াজেদ আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি পাটগ্রাম মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। এ ছাড়া তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর প্রয়াত বড় ভাই আবিদ আলী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য। পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন তাঁর ভাগনে। তাঁর দুই সন্তান রয়েছে।

আরও পড়ুন
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলী

আজ শনিবার সকালে পৌর সদরের নিউ পূর্বপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শত শত মানুষের জটলা। সবাই এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করছেন। হত্যাকাণ্ডের স্থান পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সেখানে এম ওয়াজেদ আলীর পরিহিত চাদর, চশমা ও স্যান্ডেল পড়ে আছে।

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পৌরসভার নিউ পূর্বপাড়া এলাকায় ভাগনে উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিনের বাসায় যান তিনি। ওই বাসা থেকে তাঁর বাসার দূরত্ব ৫০-৬০ গজ। কিছুক্ষণ পর ভাগনের বাসা থেকে নিজের বাসায় প্রবেশের পথে দুর্বৃত্তরা পথরোধ করে তাঁকে পাশের একটি ফাঁকা জায়গায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর মাথায়, গলায় ও কাঁধে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এম ওয়াজেদ আলীদের একই বাড়িতে বসবাস করা তাঁর ভাতিজির স্বামী আশরাফুল হাবিব বলেন, ঘটনার সময় তিনি একটি শব্দ পান। এরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখেন, ওয়াজেদ আলী ফটকের সামনে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন। আরেক প্রতিবেশী ইয়াকুব আলীও একই কথা বলেন। তবে তাঁরা কেউই দুর্বৃত্তদের দেখতে পাননি বলে জানান।

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আজিজুল হক বলেন, ‘উনি (এম ওয়াজেদ আলী) একজন ভালো মানুষ ছিলেন। এলাকায় তাঁর কোনো শত্রু নেই। তিনি একজন গুণী মানুষ ছিলেন। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, এ ধরনের একজন মানুষকে কীভাবে কেউ খুন করতে পারে।’

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য আজ শনিবার সকালে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। এ ছাড়া অন্যান্য সংস্থা তাদের মতো তথ্য সংগ্রহ করছে।