রাজশাহীতে মুক্তিযুদ্ধের বই পড়াসহ ৭ শর্তে বিএনপি ও যুবদলের ২ নেতাকে প্রবেশনে মুক্তি

বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার (বাঁয়ে) ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আদিল শাহরিয়ার
ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ায় বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আদিল শাহরিয়ার ওরফে গোর্কি প্রবশনে মুক্তি পেয়েছেন। আদালত ৭ শর্ত সাপেক্ষে তাঁদের প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন। আজ রোববার রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান এ রায় দেন।

রায়ের পরপরই আলী আজগর তালুকদারকে হেফাজতে নেওয়া হয়। আদালতে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পরপরই আদালতের নির্দেশে বাদীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশমতো নির্বাচিত বই পড়া, সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কাজ ছাড়াও তিন মাস পরপর তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে আলী আজগর তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশমতো তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া ফেসবুকে বাদীর কাছে ক্ষমা চেয়ে পোস্টও দিয়েছেন। নির্বাচিত কিছু বই পড়া ছাড়াও তিন মাস পরপর তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। তবে তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করবেন।

আলী আজগর তালুকদার আরও বলেন, ‘রায়ে আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমার নামে খোলা একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা করা হয়। পুলিশ যথাযথ তদন্ত না করেই রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করতে একপেশে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত রায় দিয়েছেন।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি আলী আজগর তালুকদার ও আদিল শাহরিয়ারকে আসামি করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা করেন বগুড়ার জলেশ্বরীতলার বাসিন্দা ও দৈনিক মহাস্থান পত্রিকার প্রকাশক তানভীর আলম। তদন্ত শেষে বগুড়া সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার বাদী তানভীর আলম দাবি করেন, ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি দৈনিক মহাস্থান পত্রিকায় ‘হেনা গংদের কাছে বগুড়া বিএনপি জিম্মি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আলী আজগর তালুকদার তাঁকে (তানভীর) জড়িয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেন। বাধ্য হয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে তিনি মামলা করেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে নয়, তানভীর গত পৌরসভা নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দলীয় সমর্থন চেয়ে ব্যর্থ হন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে নিজেকে জড়িয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেন। তিনি ওই ভুয়া আইডির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেছেন। পরে ওই আইডি ডিলিট করা হয়। কিন্তু তানভীর ওই পোস্টের কথা উল্লেখ করে মামলা করেন। পুলিশ ভালোভাবে তদন্ত না করে, জব্দ তালিকা বা ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়াই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মাহমুদুর রহমান বলেন, রায়ে দুই আসামিকে বাদীর কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ২০টি বৃক্ষরোপণ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১২টি বই পড়া ও সাইবার অপরাধ নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের শর্ত অনুযায়ী তিন মাস পরপর হাজিরা দিতে হবে।

সংশোধনী

উপরোক্ত প্রতিবেদনে ভুলবশত ‘জরিমানা’ শব্দটি প্রকাশিত হয়েছিল। আসলে এটি হবে ‘ক্ষতিপূরণ’।