নিরিবিলি পরিবেশে চলে নানা ধরনের বই পড়া

মৌলভীবাজার সরকারি গণগ্রন্থাগারে বই পড়ছেন পাঠকেরা। গত সোমবার দুপুরেপ্রথম আলো

ভবনটিকে বাইরে থেকে দেখতে আর ১০টি সরকারি-বেসরকারি ভবনের মতো। দেখলে মনে হবে, ভেতরটা মানুষের ছোটাছুটি আর কর্মচঞ্চলে পূর্ণ। মানুষের কথাবার্তায় গমগম করছে। কিন্তু ভবনের ভেতরে ঢুকল এই ভুল ভেঙে যায়। ভবনের ভেতর অনেক মানুষের দেখা মিললেও, একদম শান্ত। সবাই যার যার মতো টেবিলের দুই পাশে বসে আছেন। নানা ধরনের বই পড়ছেন।

এ রকম নিরিবিলি বই পড়ার সুন্দর একটি পরিবেশ মৌলভীবাজার জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের। এটি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের একটি পাঠাগার। জেলা শহরের কোর্ট এলাকায় এর অবস্থান। গ্রন্থাগারের পাশেই ব্যস্ত আদালত এলাকা, সরকারি মহিলা কলেজ, একটি বিদ্যালয় ও শিল্পকলা একাডেমি। অফিস ও স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে ভবনের সামনের সড়ক লোকজনের চলাফেরাতে সরগরম থাকে।

গত সোমবার দুপুরে গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলা ভবনটির দোতলার কক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন পাঠক বিভিন্ন টেবিলের দুই পাশে বসে বই পড়ছেন। বই পড়ার জন্য টেবিলসমূহ ভাগ করে দেওয়া আছে। পত্রিকার জন্য আছে আরেক বিভাগ। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা অংশ। পড়ার কক্ষের চতুর্দিকের দেয়াল ঘেঁষে বইয়ের সাজানো তাক। দেশ-বিদেশের লেখকের বিভিন্ন ধরনের বই সেসব তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। চারদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কোনো প্রয়োজনে অনুচ্চস্বরে একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। পড়া শেষ হলে কেউ উঠে যাচ্ছেন। নতুন করে আবার কেউ এসে কক্ষে ঢুকছেন, চেয়ারে বসছেন। তাঁদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী আছেন। অনেকে খাতায় প্রয়োজনীয় নোট টুকে নিচ্ছেন। পাঠকক্ষের একপাশে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। এই অংশে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যাবতীয় বই রয়েছে। আছে শিশু কর্নারও।

মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রায় এক মাস ধরে লাইব্রেরিতে আসছি। এখানে নিরিবিলি পরিবেশে বসে বই পড়া যায়।’

কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী শাহীনা আক্তার বলেন, ‘আমি আজকেই (সোমবার) লাইব্রেরিতে প্রথম এসেছি। আগে লাইব্রেরির সদস্য হব। তারপর বাসায় পছন্দের বই নিয়ে পড়ব।’

স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী চৈতালী রায় বলেন, উচ্চমাধ্যমিক থেকে তিনি এ পাঠাগারে আসেন। ছাত্রীনিবাসে থাকেন। সেখানে অনেক সময় পড়ার পরিবেশ থাকে না। এখানে নিরিবিলি পরিবেশে পড়া যায়।

জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন এ গ্রন্থাগারে আসেন। ২০১৯ সালের মে মাস থেকে নিজস্ব এই ভবনে গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম চলছে। এর আগে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবনের ভাড়া কক্ষে গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম চলত। সপ্তাহে শনিবার থেকে বুধবার, এই পাঁচ দিন সকাল নয়টা থেকে বিকেলে চারটা পর্যন্ত গ্রন্থাগারটি খোলা থাকে। সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। এ ছাড়া সরকারি সব ছুটির দিনেও গ্রন্থাগারটি বন্ধ থাকে।

গ্রন্থাগারটিতে সদস্য, কবিতা, গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ, জীবনী, ভ্রমণ কাহিনি, ইতিহাস, ধর্মীয়, কম্পিউটারবিষয়ক, আইনবিষয়কসহ বিভিন্ন ধরনের বই আছে ২৭ হাজার ৫৭৭টি। আর পাঠকদের জন্য আটটি দৈনিক পত্রিকা রাখা আছে। সদস্য নয় এমন যে কেউ বসে বই পড়তে পারেন। তবে বাসাবাড়িতে বই নিয়ে পড়তে হলে সদস্য হতে হয়। সদস্যের তিন শ্রেণির ক্যাটাগরি আছে। শিশু ২০০ টাকা, ছাত্র ৫০০ টাকা এবং সাধারণ সদস্য ১ হাজার টাকা। বর্তমানে এই গণগ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা ১০৩।

জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ অহিদুজ্জামান গত সোমবার বলেন, নতুন ভবন হওয়ার পর গণগ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বেড়েছে বইয়ের সংগ্রহ। এখানে বই পড়ার ভালো সুযোগ-সুবিধা আছে। সব ধরনের পাঠকই আসেন গ্রন্থাগারে। মূলত সাহিত্যের পাঠক বেশি। তাঁরা আরও পাঠক নিয়ে আসতে চাচ্ছেন। লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় দিবস উপলক্ষে রচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।