দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস–সংকট, ঢাকায় যাচ্ছে না এলএনজি

গ্যাসপ্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরের খাজা রোড এলাকার বাসিন্দা রুবি আক্তারের বাসায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রান্না হয়নি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকেই তাঁদের বাসায় গ্যাস নেই। বেলা দুইটার দিকে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। দুপুরে হোটেল থেকে খাবার এনে খেয়েছেন। রাতেও গ্যাস না এলে একই অবস্থা হবে।

শুধু রুবি আক্তার নন, চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নগরের ফিলিং স্টেশনগুলোয়ও গ্যাস নেই। এতে গ্যাসের জন্য যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা গেছে। মূলত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালে দুই দিন ধরে গ্যাসবাহী জাহাজ ভিড়তে পারছে না। এ কারণে চট্টগ্রামসহ জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। পেট্রোবাংলাও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে।

আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। একটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। অন্যটি সামিট এলএনজি টার্মিনাল। এই দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দিনে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। টার্মিনাল থেকে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়ে কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন মো. ফরহাদ ওমর প্রথম আলোকে বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত দুই দিন দুটি টার্মিনালে কার্গো ভিড়তে পারেনি। তবে আজ সকালে সামিট এলএনজি টার্মিনালে একটি কার্গো যুক্ত হয়েছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। শফিউদ্দিন মো. ফরহাদ ওমর জানান, দুটি টার্মিনালে ১৮০ থেকে ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। সব গ্যাসই আসছে চট্টগ্রামে। ঢাকায় কোনো গ্যাস যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় আপাতত আনা যাচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে একটি কার্গো টার্মিনালে ভিড়তে পেরেছে। সন্ধ্যার মধ্যেই গ্যাসের চাপ বেড়ে যাবে। আরেকটি কার্গো সন্ধ্যায় যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আজকের মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

দুর্ভোগ নগরজুড়ে

গ্রাহক ও কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর, পাহাড়তলী, আগ্রাবাদ, চটেশ্বরী, লালখান বাজার, জামালখান, চেরাগীপাহাড়, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো গ্যাস নেই। অন্যান্য এলাকায় গ্যাস থাকলেও চাপ একেবারে কম।

হালিশহরের বাসিন্দা রোকেয়া বেগমের বাসায় গতকাল বিকেল থেকে গ্যাস নেই। আজ বেলা আড়াইটায় তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, গ্যাস না আসায় রান্না হয়নি। হোটেল থেকে কিনে এনেছেন খাবার। এদিকে নগরের ফিলিং স্টেশনগুলোয়ও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে গ্যাসচালিত যানবাহনগুলো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।

জিইসি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নূরে আলমের বাসায়ও গ্যাস নেই। তাঁরা কেরোসিন তেলের চুলায় রান্না করে কোনোমতে দিন পার করছেন। মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘গ্যাস চলে যাবে জানতাম না। এ কারণে দুর্ভোগটা বেশি পোহাতে হলো। আগে জানলে রান্না করে রাখতে পারতাম।’

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক মো. শফিউল আজম খান প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে চাহিদা ২৮০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গতকাল পাওয়া গেছে ২০০ মিলিয়ন। এ কারণে শিল্প ও বাসাবাড়িতে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া নগরের ফিলিং স্টেশনেও গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে সার ও বিদ্যুতে গ্যাস যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত কক্সবাজারে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর পর থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি কিছুটা কম ছিল। ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে আবার বৃষ্টি বাড়তে থাকে। বর্তমানে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। দমকা হাওয়া বইছে।