২৬ দাবিতে উপাচার্যকে সাত দিনের আলটিমেটাম শিক্ষক সমিতির

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক। আজ দুপুরে শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধ করা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়াসহ ২৬টি দাবিতে উপাচার্য শিরীণ আখতারকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়ের মধ্য দাবি পূরণ না হলে সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকের মাধ্যমে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সমিতির নেতারা।

আজ রোববার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক সমিতি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য রয়েছেন ১১ জন। তবে সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছয়জন। তাঁরা হলেন সমিতির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক, সহসভাপতি আলা উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ শেখ সাদী ও লায়লা খালেদা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন, শিক্ষকদের অধিকার, শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দাবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্যকে জানানো হচ্ছে। কিন্তু উপাচার্য আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। অনেক দিন ধরে উপাচার্য এসব বিষয় সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে আসছেন, কিন্তু এসব আশ্বাস পূরণ করা হয়নি; বরং উপাচার্য আশ্বাস দিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাই বাধ্য হয়ে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক সমিতি।

শিক্ষক সমিতির উল্লেখযোগ্য দাবির মধ্যে রয়েছে সিন্ডিকেটে ডিন, প্রাধ্যক্ষ ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধির নির্বাচন আয়োজন করা; শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত অডিও ‘কেলেঙ্কারি’তে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিয়োগ-বাণিজ্য চক্রকে খুঁজে বের করা; বিতর্কিত নির্বাচনী বোর্ড দিয়ে বিভিন্ন বিভাগে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে দেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ করা এবং সব অবৈধ নিয়োগ বাতিল করা;  শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারী ও সাংবাদিকদের মারধর-হুমকির বিচার নিশ্চিত করা।

গত বছরের অক্টোবরে ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে চাহিদা বিবেচনা করে বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে কম বা বেশি নিয়োগ দেওয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়া শিক্ষকদের পদোন্নতিতে অযৌক্তিকভাবে বাধা সৃষ্টিকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করারও দাবি জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাতটি আবাসিক হলে নিয়ম মেনে কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ আসন বরাদ্দ দিয়েছে ২০১৭ সালের জুনে। এর পর থেকে শিক্ষার্থীরা কে হলের কোন কক্ষে থাকবেন, তা নিয়ন্ত্রণ করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষক সমিতির। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম পরিবহন শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি, গত ৭ সেপ্টেম্বর ট্রেনের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানায় শিক্ষক সমিতি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি
ছবি: প্রথম আলো।

গত ১ আগস্ট শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ডে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং গণমাধ্যমে গোপনীয় নথি প্রকাশের অভিযোগে পালি বিভাগের সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পালি বিভাগের প্রভাষক পদে ‘জালিয়াতি’র পরও এক সহকারী প্রক্টরের স্ত্রীকে নিয়োগের চেষ্টার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে গঠন করা কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।

এ ছাড়া সমিতির দাবির মধ্যে রয়েছে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট, শিক্ষকদের যাতায়াত-সংকট নিরসনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস কেনা; সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রথম থেকে চতুর্থ গ্রেডের শিক্ষকদের ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকা হারে ইন্টারনেট ও টেলিফোন ভাতা দেওয়া;  দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষকদের পরীক্ষা-সংক্রান্ত কাজের পারিতোষিক ও বিভিন্ন ভাতা বাড়ানো; ঢাকার গেস্টহাউসের সুবিধা সম্প্রসারণ করা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, শিক্ষকদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। তাই শিক্ষকদের স্বার্থে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের হুমকি উপেক্ষা করে তিনি সংবাদ সম্মেলন করছেন।

শিক্ষক সমিতির এসব দাবি সম্পর্কে জানতে বেলা একটার দিকে উপাচার্য শিরীণ আখতারের কার্যালয়ে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের এসব কর্মসূচির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পরিষদেরই চারজন শিক্ষক। তাঁরা হলেন সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আদনান মান্নান, সদস্য রকিবা নবী, মো. দানেশ মিয়া ও মোহাম্মদ ফরিদুল আলম। এই চার শিক্ষক প্রশাসনপন্থী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। চার শিক্ষকের মধ্যে তিনজনই তিনটি আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সংবাদ সম্মেলন, অবস্থান ধর্মঘট, বিবৃতিসহ শিক্ষক সমিতির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ৩০ ভাগ সদস্যকে না জানিয়ে, আলোচনা না করে, কেবল শীর্ষ নেতাদের স্বাক্ষরে করা হয়েছে। এর দায়ভার কোনোভাবেই বিবৃতিদাতা চার শিক্ষক নেবেন না।