‘বাজার দ্যাকার মাও বাপ নাই’

রংপুরের বদরগঞ্জে রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। সবজি ও অন্যান্য পণ্য কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

পবিত্র রমজান মাস আজ শুরু। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়। গতকাল রংপুর নগরের সিটি বাজারেছবি: মঈনুল ইসলাম

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা। রংপুরের তারাগঞ্জ সবজি বাজারে থলে হাতে ঘুরছেন আনছার আলী। বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন। যতবার দোকান পরিবর্তন করছেন, ততবার আনছার আলীর হতাশা বাড়ছে।

আনছার আলীর অস্থির হয়ে ছোটাছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘রাইত পোহাইলে রোজা। রাইতোত সিহ্‌রি খাবার নাগবে। গতকাইল যে সবজি ৫০ টাকাত কিনছু, আইজ (বৃহস্পতিবার) তাক ৭০ টাকা চাওছে। খালি সবজি নোয়ায় এবার মুড়ি, চিড়া, গুড় চিনি সউগের দাম বাড়ছে। কাইলকার দামের সাথে আইজকার দামের কোনো মিল নাই। দুই ঘণ্টা থাকি ব্যাগ ধরি ঘুরোছু কিছু কিনবার পারুছুং (পারছি) না।’

আনছার আলী জানান, তারাগঞ্জের বালাপাড়া গ্রামের তাঁর বাড়ি। পেশায় তিনি দিনমজুর। প্রতিদিনের শ্রমের বিনিময়ে ৪০০ টাকা পান। তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার টেনেটুনে চলে। রোজা থাকবেন, তাই তিনি তারাগঞ্জে বাজার করতে এসে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁর অভিযোগ, এক রাতের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়েছে।

পবিত্র রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়ায় আনছার আলীর মতো রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের হাজারও নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, বুধবার রাত শেষ হয়ে সকাল হওয়ার পরই প্রতি কেজি সবজিতে ৫-১০ টাকা, চিনিতে ১০ টাকা, লেবুতে তিন টাকা, ছোলা ১০ টাকা, গুড় ৩০ টাকা, মুড়ি-চিড়া ৫ টাকা, ডিম প্রতি হালি ছয় টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখে গেছে, প্রতি হালি ডিম ৪৮ টাকা এবং পটোল ৭০, ঢ্যাঁড়স ৮০, করলা ৭০, শজনে ডাঁটা ১৩০, বরবটি ৬০, কাঁচা মরিচ ৮০, পেঁয়াজ ৩৬, আদা ১৪০, রসুন ৯২, মুড়ি-চিড়া ৮০, গুড় ১৬০, চিনি ১২০, তরমুজ ৪০, ছোলা ৯৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। অথচ গত বুধবার প্রতি হালি ডিম ৪২ টাকা এবং পটোল ৫৫, ঢ্যাঁড়স ৬৫, করলা ৬৫, শজনে ডাঁটা ১০০, বরবটি ৫০, কাঁচা মরিচ ৬০, পেঁয়াজ ৩০, আদা ১২০, রসুন ৮৫, মুড়ি ৬৫, গুড় ১২০, চিনি ১১২, তরমুজ ৩৫ ও ছোলা ৮৫ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া প্রকারভেদে খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির মাংস কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৬০ এবং বিভিন্ন জাতের মাছের কেজিতে গড়ে বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা।

বদরগঞ্জ বাজারে কথা হয় আমরুলবাড়ি গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অবাক করার কথা বাহে। গতকাইলকা (গত বুধবার) যে দোকান থাকি ৫৫ টাকা দিয়া এক কেজি পটোল কিননো, সেই দোকানি আইজ কওছে ৭০ টাকা। দাম বেশির কথা জাইনবার চাইলে দোকানি হাসে। রোজা আসতে না আসতেই বাজার হু হু করি বাড়ি গেইছে। বাজার দ্যাকার মাও বাপ নাই।’

দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারাগঞ্জের সবজি ব্যবসায়ী এমদাদুল হক বলেন, রোজা ঘিরে সবকিছুর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া বাজারে সরবরাহ কম ও পাইকারি বাজারে দাম বেশি। তাই সামান্য লাভ ধরে আমরা বিক্রি করছি। দাম বেশি হওয়ায় মানুষ প্রয়োজনের অর্ধেক কেনাকাটা করছেন।

বদরগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দামটা তো ভাই আড়তে আইজ বেশি। তবু তুলনামূলক কম লাভে আমরা সবজি বিক্রি করছি।’

বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন, রমজান ঘিরে কোনো ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম কারসাজি করে বাড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।