সাক্ষাৎকার: আব্দুর রশিদ

জয়–পরাজয় নয়, জাকসু নির্বাচন হচ্ছে, এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুর রশিদ (জিতু)। জাকসু নির্বাচনের সামগ্রিক দিক নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শামসুজ্জামানআব্দুল্লাহ আল মামুন

প্রথম আলো:

জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রার্থী হওয়ার পেছনে আপনার মূল প্রেরণা কী? কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

আব্দুর রশিদ: গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু করার পর এক পর্যায়ে আন্দোলন বেগবান হয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। সে সময় আমাদের ৯ দফা দাবির মধ্যে একটি ছিল দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও অকার্যকর থাকা ছাত্র সংসদ কার্যকর করা। গত বছরের ৫ আগস্টের পরও আমরা সেসব দাবি আদায়ে অটল ছিলাম। ওই সময় শিক্ষার্থীরাও জাকসু বাস্তবায়নের জন্য আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এরপর জাকসু বাস্তবায়নের আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরা পাশে ছিলেন। সেখানে থেকেই ভিপি পদে নির্বাচনের উৎসাহ পেয়েছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি।

প্রথম আলো:

নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জাকসুতে কী ধরনের কাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবেন?

আব্দুর রশিদ: জাকসু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝখানে থেকে দাবি আদায়ে কাজ করে। শিক্ষার্থীরা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে মূলত যৌক্তিক বিষয়গুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরে সেগুলো আদায়ের জন্য। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য।

প্রথম আলো:

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোনগুলো বলে আপনি মনে করেন? কীভাবে সমাধান করবেন?

আব্দুর রশিদ: বর্তমানে আমাদের অনেকগুলো সমস্যা আছে। এর মধ্যে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা ও ক্লাসরুম সংকটের বিষয়টি আছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং হলগুলোতে যেসব সুযোগ–সুবিধা থাকার কথা ছিল, সেগুলো নেই। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র ও পরিবহন সেক্টরের সমস্যা আছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব সমস্যা সমাধানে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করব।

প্রথম আলো:

আগে আপনি ছাত্রলীগে ছিলেন। পরে জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গিয়ে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটা কি নির্বাচনে আপনার জন্য ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক হবে?

আব্দুর রশিদ: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আমার মনে হয়েছে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। জুলাইয়ের প্রথম থেকেই সেই আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম। বিবেকবোধ থেকে দেশের স্বার্থে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিদ্রোহ করে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সামনের সারিতে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি, আহত হয়েছি। শিক্ষার্থীরা আমার পাশে ছিলেন এবং এখনো আছেন। শিক্ষার্থীরা সব সময় আমাকে ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করেছে।

প্রথম আলো:

অভিযোগ উঠেছে ‘ঘুমন্ত ছাত্রলীগ’-এর অনেকে আড়ালে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছে—এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আব্দুর রশিদ: জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে অনেকেই এমন ভিত্তিহীন কথা বলছেন। ক্যাম্পাসে যাঁরা ভোটার, তাঁরা বিচার–বিবেচনা করে যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁকেই ভোট দেবেন।

প্রথম আলো:

শিক্ষার্থীদের কাছে আপনাদের প্যানেলের প্রধান প্রতিশ্রুতি কী কী?

আব্দুর রশিদ: জাকসু নির্বাচনে আমরা তাঁদের নিয়েই প্যানেল করেছি, যাঁদের কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক নেই। স্বতন্ত্র কিছু প্রার্থী নিয়ে প্যানেল করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের প্রধান প্রতিশ্রুতি থাকবে, মেধাভিত্তিক দেশ গঠনের যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ছিলাম, সেই মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রথম আলো:

যদি নির্বাচনে জয়ী না হন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে আপনার অবস্থান থাকবে?

আব্দুর রশিদ: জয়–পরাজয় নয়, জাকসু নির্বাচন বাস্তবায়িত হচ্ছে, এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে যাঁকেই নির্বাচিত করুন না কেন, আমরা রায়কে মেনে নিয়ে নতুনভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিনির্মাণের জন্য একসঙ্গে কাজ করব।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

আব্দুর রশিদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।